চায়ের ‘রাজধানীতে’ ভেজাল চা
চায়ের নামে বিক্রি হচ্ছে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ভেজাল চা। ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা কম মানের চা-পাতা ব্যবহার করে দুর্গন্ধযুক্ত প্যাকেটে ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। এই চাগুলো মানহীন হওয়ায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলেই চায়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই অবৈধ কর্মকাণ্ড ঠেকাতে অভিযানে নেমেছে চা বোর্ডের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপ-সচিব সাবিনা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে আজ শুক্রবার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একাধিক স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় হবিগঞ্জ রোডে অবস্থিত ‘গ্রিন লিফ টি ফ্যাক্টরি’ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি চা বোর্ডের বৈধ নিবন্ধন ছাড়াই গ্রিন টি উৎপাদন করছে। এ অপরাধে কারখানাটিকে সিলগালা করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
একইদিনে সোনার বাংলা রোডে অবস্থিত ‘মেসার্স গাছপীর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড টি হাউজ’ এ অভিযান চালিয়ে শাহীবাগ আবাসিক এলাকায় সংরক্ষিত ৭৫ বস্তা ভারতীয় সিডি চা (প্রতি বস্তা ৭০ কেজি) জব্দ করা হয়। অবৈধভাবে বিদেশি চা সংরক্ষণের অপরাধে জুবেল মিয়া নামক এক ব্যক্তিকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় বিটিআরআই পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন, চা বোর্ডের সহকারী পরিচালক (বাণিজ্য) মোঃ আব্দুল্লাহ আল বোরহান এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিনা আক্তারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চা বোর্ডের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপসচিব সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমরা ভারতীয় চা জব্দ করেছি, যেগুলো অবৈধভাবে চোরাই পথে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এই চাগুলো মূলত ডাস্ট ক্যাটাগরির। যা একেবারে নিম্নমানের চা, এগুলো সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। অথচ এই নিম্নমানের চা আমাদের দেশের বাজারে ভালো মানের চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান শুরু হয়েছে পঞ্চগড় থেকে এবং আমরা একই ধরণের অভিযান বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে পরিচালনা করছি। শ্রীমঙ্গলে আমরা দেখেছি এ ধরনের প্রচুর অবৈধ চা ব্যবসা গড়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।’
সাবিনা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘আমরা বিগত তিনদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাচ্ছি এবং ইতিমধ্যে আরও কিছু চা জব্দ করেছি, যেগুলো সরকার নির্ধারিত নিলামের বাইরে বেআইনিভাবে বাজারজাত করা হচ্ছিল। ফলে সরকার চা নিলাম থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে, পাশাপাশি বাদ পড়ছে ভ্যাট-ট্যাক্সের আওতা থেকেও।’
ভারত থেকে অবৈধভাবে চা আমদানির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি, ভারত থেকে খুবই কম দামে নিম্নমানের চা অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এই চাগুলো মানহীন হওয়ায় দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও বিপজ্জনক। আমরা চাই, বাংলাদেশের চা শিল্প রক্ষা পাক, আমাদের দেশের উৎপাদিত চায়ের মান উন্নত হোক এবং এই অবৈধ আমদানি ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে যেন আমাদের দেশের চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্যই আমরা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি এবং অভিযান অব্যাহত রাখব।’