টানা বৃষ্টিতে বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ চরমে

বেগমগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
১০ জুলাই ২০২৫, ১৬:১০
শেয়ার :
টানা বৃষ্টিতে বেগমগঞ্জে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ চরমে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে টানা বৃষ্টির পানিতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার চৌমুহনী শহরসহ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক, শাখা-সড়ক, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ডুবে গেছে হাঁটু পানিতে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বেগমগঞ্জসহ নোয়াখালীতে থেমে থমে মুষলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

বেগমগঞ্জের অধিকাংশ ছোট বড় খাল এবং কালবার্ড গুলোতে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও মৎস্য প্রজেক্টের নামে খালের উপর অবৈধভাবে বাঁধ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে পানি নামতে না পারায় বর্তমানে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম দুর্বলতায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, রোগী ও সাধারণ পথচারীরা।

সরেজমিনে আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় চৌমুহনী শহরতলীতে অবস্থিত প্রাচীনতম বেগমগঞ্জ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস এলাকায় হাঁটু সমান পানি এবং নোংরা পানিসহ ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে আছে। এছাড়ও চৌমুহনী শহরসহ বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। এসব এলাকার রাস্তায় পানি ওঠায় কোথাও কোথাও রিকশা, অটোরিকশা চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

চৌমুহনী শহরের কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘প্রতি বছরই একটু বৃষ্টি হলেই শহরের এমন জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ও সক্রিয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে থাকায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরে অপরিকল্পিত আবাসন ও দোকানপাট গড়ে তোলার ফলে বৃষ্টির পানি আর কোথাও যেতে পারে না। যদি এখনই টেকসই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী দিনে চৌমুহনী শহর স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে।’

এছাড়াও টানা বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘের ও পোল্ট্রি খামার ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। বিশেষ করে বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর, জীরতলী, গোপালপুর, আমানউল্যাহপুর, ছয়ানী, হাজীপুর, কাদিরপুর, খানপুর, গনিপুর, শরিফপুর, জিরতলী, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, একলাসপুরসহ চৌমুহনী পৌর এলাকার অধিকাংশ নিচু এলাকায় এমন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

শহরের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘টানা বর্ষণের ফলে পানিতে ডুবে আছে কাঁচা ও আধাপাকা সড়ক। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ ছোট যানবাহন চলাচল প্রায়ই বন্ধ হয়ে গেছে। হেঁটে চলা পথচারীদেরও পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বৃষ্টির পানি জমে অনেক দোকানপাটে পানি উঠে গেছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পণ্যসামগ্রী।’

বেগমগঞ্জের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘খাল-বিল, নালা-নর্দমা দিয়ে সাধারণত পানি নামে। কিন্তু সেগুলো অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে পানি চলাচল বন্ধ করে দিলে জলাবদ্ধতাতো হবেই।’

নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেগমগঞ্জসহ জেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৯ জুলাই আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি পেয়েছে। এরপর ১০ জুলাই থেকে আগামী ১২ জুলাই পযন্ত বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম (ক্লাস) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন এবং চলমান দুর্যোগ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তারা প্রস্তুত থাকবেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইসরাত নাসিমা হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে জেলা আওহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েকদিন জেলায় টানা বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও বৃষ্টি হতে পারে।’