অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ, সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
০৯ জুলাই ২০২৫, ১৮:৩১
শেয়ার :
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ, সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ

নিয়োগ বাণিজ্যের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের সংবাদ প্রচার করায় সাংবাদিকের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রংপুরের বদরগঞ্জে ওয়ারেছিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও ওলামালীগের সভাপতি আব্দুল আলিম। এর আগে গত গত ৬ জুলাই দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় ওয়ারেছিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের নামে থানায় অভিযোগ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক আমাদের সময়সহ সংবাদ সংস্থা এনএনবি’র উপজেলা প্রতিনিধি ও প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক বিপ্লব সরকারকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টায় অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এনিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। 

জানা গেছে, বদরগঞ্জের ওলামালীগের সভাপতি ও ওয়ারেছিয়া ইসলামিয়া আলির মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মাদ্রাসায় ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সেই সময় অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করলে, তার দলীয় আওয়ামী এমপি, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দাপট দেখান অধ্যক্ষ আব্দুল আলিমে। একই সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির আখ্যায়িত করে জেলহাজতের ভয় দেখিয়ে প্রতিবাদী শিক্ষক-কর্মচারীদের মুখ বন্ধ করে রাখেন।

এদিকে জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ডিউক চৌধুরী, মেয়র টুটুল চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বিসহ মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যক্ষ নিয়োগ বাণিজ্যের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ও নির্যাতিত, শোষিত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে আপোষ-মিমাংসা করার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। প্রতিবাদী শিক্ষক-কর্মচারী ওই স্বৈরশাসক অধ্যক্ষের আপোষ-মিমাংসায় কোনো ক্রমে রাজি না হওয়ায় তিনি আত্মসাতের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার লোভ দেখাতে থাকে। এক পর্যায়ে নির্যাতিত ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইউএনও, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এনিয়ে দৈনিক আমাদের সময়সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব চ্যানেলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সরকারি দপ্তরগুলো ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বসেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ বাদী হয়ে দৈনিক আমাদের সময় এর উপজেলা প্রতিনিধি বিপ্লব সরকার ও মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আব্দুল রউফের নামে থানায় অভিযোগ করেন। এদিকে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আব্দুল রউফ নির্যাতিত ও শোষিত শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষে বাদী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, ‘মাদ্রাসার ডোনেশনকৃত ৪০ লাখ টাকা প্রতিষ্ঠানের কোনো উন্নয়ন মূলক কাজ না করে নিজে আত্মসাৎ করেন।’

তবে অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ হয়। তখন সভাপতি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মামুন। এর বেশি কিছু বলতে পারবো না।’

অভিযোগকারী উপধাক্ষ আব্দুল রউফ বলেন, ‘উপজেলা ওলামালীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম নিয়োগ বাণিজ্যের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে তদবিরসহ এখনও মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে প্রতিবাদী শিক্ষক-কর্মচারী ও সাংবাদিককে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করছেন।’

প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী নুরু বলেন, ‘অবিলম্বে দুর্নীতির অভিযুক্ত ও মামলাবাজ ওলামালীগপন্থি অধ্যক্ষকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাদ্রাসা থেকে অপসারণ না করা হলে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে আন্দোলনের আল্টিমেটাম ঘোষণা করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দৈনিক আমাদের সময়’কে বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যের ঘটনা তদন্ত তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’