অসহায় পরিবারের মেয়ের বিয়েতে ইউএনও-ওসি
ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক পরিবারের অসহায় এক মেয়ের বিয়েতে পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। ওই বিয়েতে শুধু আর্থিক সহায়তাই নয় বরং উপস্থিত থেকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন করেছেন তারা।
জানা যায়, উপজেলার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদিরাম সরকার পাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ শীল নাড়ু তার মেয়ে সুমিত্রা শীলকে বিয়ে দিতে গিয়ে চরম অর্থ সংকটে পড়েন। সামর্থ্য না থাকায় বিয়ে ঠিক হলেও আনুষ্ঠানিকতার ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না তিনি। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার সচেতন যুবসমাজ ও সংবাদকর্মীরা এগিয়ে আসেন সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে। পরে বিষয়টি গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম অবহিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমানকে। মানবিক এ প্রশাসক কোনো দ্বিধা না করে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেন।
শুধু তাই নয়, গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টায় তিনি নিজে উপস্থিত হন সেই বাড়িতে। তার উপস্থিতি যেন হয়ে উঠেছিল এক অসহায় পরিবারের জন্য আশীর্বাদ। একই সময়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম কনের জন্য একটি শাড়ি উপহার দেন। উপস্থিত ছিলেন- গোয়ালন্দ প্রেসক্লাবের সদস্য সিরাজুল ইসলাম, রাকিবুজ্জামান রাকিব, জেলা যুবদলের যুগ্ম সদস্যসচিব মুরাদ আল রেজা, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, পৌর মহিলা দলের সভাপতি রাজিয়া দেলোয়ারসহ আরও অনেকে।
বিয়ের মুহূর্তটি ছিল এক অভাবনীয় আবেগের। ইউএনও নিজ হাতে কন্যাদানে সহযোগিতা করেন। এলাকাবাসী এ মানবিক দৃশ্য দেখে আবেগে কেঁদে ফেলেন। এক হতদরিদ্র পরিবার যেন ফিরে পায় সম্মানের সঙ্গে একটি বিয়ের স্মৃতি। অনেকেই বলেছেন, ‘এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা আরও দৃঢ় করে।’
ইউএনও মো. নাহিদুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন সবসময়ই গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে। চিকিৎসা কিংবা বিয়ে মানবিক জায়গা থেকে যতটুকু পারি, সহায়তা করি। আজ এক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক পরিবারের মেয়ের বিয়েতে পাশে থাকতে পেরে আত্মতৃপ্তি অনুভব করছি। আয়োজনটি শুধু একটি বিয়ে নয়, এ ছিল ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ। সমাজে শক্তির জায়গাগুলো যখন এমনভাবে এক হয়ে কাজ করে, তখনই গড়ে ওঠে মানবিক বাংলাদেশ।’