ভরা মৌসুমেও পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি
০৯ জুলাই ২০২৫, ১৬:১২
শেয়ার :
ভরা মৌসুমেও পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারের দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় গত এপ্রিল মাসে। এরপর থেকেই নদীতে জাল, নৌকা, ট্রলার ও মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের প্রায় ৫ হাজার জেলে। ইলিশ শিকারের নেশায় পদ্মায় দিন-রাত চষে বেড়াচ্ছেন তারা। এ সময়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার প্রায় ৫ হাজার জেলে।

টানা দুই মাস বেকার থাকা পর কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে মহাজন, আড়তদারের মোটা অঙ্কের দাদনের টাকা, ধারদেনা এবং এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। সঙ্গে পরিবারের খাবারের চিন্তায় চরম হতাশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের জেলেরা।

জেলে সূত্রে জানা গেছে, সুরেশ্বর ও চাঁদপুরের নামা থেকে ভোলা পর্যন্ত ১০ নদী এলাকাকে ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। এর জন্য ওই এলাকায় সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় প্রশাসন ১ মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত পদ্মায় সব ধরনের জাল ফেলা বন্ধ করে দেয়।

সরজমিনে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে মাওয়া আড়তে ও হাসাইল কয়েকটি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ায় মৎস্য ঘাটে চলছে হাহাকার। ক্রেতা-বিক্রেতাদের নেই সমাগম। জমে উঠছে না মৎস্যঘাট। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসলেও ইলিশ না ধরা পড়ায় খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের।

মাওয়া ঘাটে কয়েক জেলেরা বলেন, ‘১ তারিখ থেকে নদীতে মাছ ধরতে নামছি। প্রতিদিনই আমাগো সাড়ে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু সারাদিন-রাত জাল বাইয়া মাত্র তিন থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ইলিশ মাছ পাই। এমনেতেই তো আগের দেনায় জর্জরিত তার ওপর আবার নতুন কইরা দেনায় পড়ছি।’

মাওয়া ঘাটের আড়ৎ মালিক চাঁন মিয়া মাদবর বলেন, ‘জেলেরা প্রতিদিন নদীতে গিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। মাছ না পাওয়ায় ঘাটে পাইকার আসে না। আসলেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে, অনেককে। তাই আড়ৎ আগের মতো জমে উঠেনি। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য।’

এ ব্যাপারে লৌহজং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রেজউল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর এখনো বৃষ্টি শুরু না হওয়ায় নদীতে ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। সামনে বৃষ্টিপাত হলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে। তবে আগামী এক সপ্তাহ কিংবা ১০ দিনের মধ্যে ইলিশ না পাওয়া গেলে বুঝতে হবে জলবায়ুগত সমস্যা রয়েছে।’