ভালো নেই ফরিদা পারভীন
রাজধানীর একটি হাসপাতালে বেশ ক’দিন ধরেই চিকিৎসাধীন দেশ বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না বলে জানিয়েছেন ভাওইয়া শিল্পী ও গীতিকার একেএম মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) সকালে গাজী ভাইয়ের (ফরিদা পারভীনের স্বামী যন্ত্রসংগীতশিল্পী গাজী আবদুল হাকিম) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন ফরিদা আপার অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। তার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। তিনি ফরিদা আপার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে।’
এদিকে গতকাল সোমবার রাত থেকে ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়েছে নেটদুনিয়ায়। এ প্রসঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুকে ফরিদা পারভীনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় তার পরিবারের সবার খারাপ লাগছে। এমন কাজ থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন শিল্পীর পরিবারের লোকজন।’
বলা দরকার, ফরিদা পারভীন গত কয়েক বছর ধরে কিডনি, শ্বাসকষ্টজনতি রোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। সম্প্রতি ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে ৫ জুলাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে খবর আসে, অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ফরিদা পারভীন। এমন খবরে বিরক্ত শিল্পীর ছেলে ইমাম জাফর নোমানি।
তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা যে কজন ভাই-বোন আছি, আমরা ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত (ওয়েল এস্টাবলিশড)। আমরা আমাদের মায়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম। আর আমরা যদি চিকিৎসা ব্যয়বহন নাও করি, তাহলে আমার মায়ের যে টাকা-পয়সা আছে, তা দিয়েও চিকিৎসার ব্যয়বার বহন করতে সক্ষম।’
পরিবারের সবাই- তিনি নিজে, ভাইবোন, তাদের জীবনসঙ্গীরা ও অন্যরাও ব্যক্তিগতভাবে ফরিদা পারভীনের সেবা করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
ইমাম জাফর আরও বলেন, ‘আসলে আম্মার শরীর খারাপ অনেক দিন ধরেই। সেই ২০১৯ সাল থেকেই তার কিডনির সমস্যা। অনেক দিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এখন ডায়ালাইসিস নেওয়া শুরুর পর থেকেই তার শরীরটা খারাপ হয়ে পড়ে। তার অসুস্থতার খবর শুনে উপদেষ্টা থেকে শুরু করে আমাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় থেকেও যোগাযোগ করা হয়েছে যে, তার চিকিৎসায় কোনো আর্থিক সহায়তা লাগবে কিনা। এটা জানার পর আমার আম্মা ফরিদা পারভীন জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের কোনো সহযোগিতা নিতে চান না।’
তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, কেউ যেন এ নিয়ে গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না ছড়ান। বরং ফরিদা পারভীনের সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত সবাই আম্মার জন্য দোয়া করবেন। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে নিজ অঙ্গনে ফিরুক।’
আরও পড়ুন:
‘এভাবে বিয়ে করা নাকি অর্থহীন’
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত গাইতে শুরু করেন ফরিদা পারভীন। ১৯৭৩ সালের দিকে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে ফরিদা পারভীন লালনসংগীতে তালিম নেন।
ফরিদা পারভীনকে বলা হয় লালন কন্যা। লালন ফকিরের গান গেয়ে দেশে-বিদেশে খ্যাতি পেয়েছেন। ক্ল্যাসিক ও আধুনিক গানেও নন্দিত তিনি। ১৯৮৭ সালে ফরিদা পারভীন সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক অর্জন করেন। এছাড়া ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের পক্ষ থেকে ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার পেয়েছেন। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবেও ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এই শিল্পী।