স্ত্রীকে না জানিয়ে গোপনে তালাক দিয়ে ফের বিয়ে, নেপথ্যে কী
দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশলের আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাইমুল ইসলাম জুয়েল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। বিয়ের এক মাস না যেতেই তিনি স্ত্রীকে তালাক দেন। এর দুই মাসের মাথায় তালাকপ্রাপ্ত সেই নারীকে ফের বিয়ে করেন।
জুয়েলের প্রথম বিয়েতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর হলেও দ্বিতীয় বিয়েতে তা করা হয় দেড় লাখ টাকা। তবে তালাক ও দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনার কিছুই জানেন না ভুক্তভোগী নারী।
নাইমুল ইসলাম জুয়েল নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় কাচারিপাড়া মহল্লার সবজি বিক্রেতা জালাল উদ্দিনের ছেলে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে একই উপজেলার মশিন্দা শিকারপাড়া গ্রামের কৃষক আফাজ প্রামাণিকের মেয়ে ইতি খাতুনের (১৯) সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয়।
ইতির মামা আব্দুল বারী বলেন, ‘বিয়ের কয়েক দিন পরেই ইতির শাশুড়ি নিলুফা বেগম তাদের কাছ থেকে জরুরি প্রয়োজন দেখিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ধার নেন। এরপর জুয়েল ও তার মা নিলুফা স্থানীয় আব্দুল লতিফ কাজীর যোগসাজসে গত ২২ জানুয়ারী গোপনে ভুয়া তালাকনামা তৈরি করেন। আবার ওই কাজীকে দিয়েই একই কায়দায় গত ১৫ মার্চ ইতি ও জুয়েলের দ্বিতীয় বিয়ের নিকাহনামা তৈরি করানো হয়। মোহরানার টাকা আত্মসাৎ করতেই ইতির সঙ্গে প্রতারণা করে তার স্বামী-শাশুড়ি।’
ইতির বাবা আফাজ প্রামাণিক বলেন, ‘স্বামী-শাশুড়ির সঙ্গে ইতির কোনো দ্বন্দ্ব ফাসাদ নেই। ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করতে এবং ৫ লাখ টাকার দেনমোহর দেড় লাখ টাকা করতে ওই ভুয়া তালাক এবং দ্বিতীয় বিয়ের কাগজ তৈরি করেন ইতির স্বামী ও শাশুড়ি।’
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ইতি বলেন, ‘তালাক ও দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে আমি ও আমার বাবা-মা কেউ কিছু জানতাম না। কোরআন শিক্ষার নামে একবার রঙিন কাগজে স্বাক্ষর নেন আমার শাশুড়ি। দ্বিতীয় বিয়ের ভুয়া কাগজ করেই ক্ষান্ত হননি তিনি। এফিডেভিট কাগজপত্রও তৈরি করেছেন। এরপর আমাকে কৌশলে বাপের বাড়িতে তাড়িয়ে দিয়েছেন শাশুড়ি।’
ঘটনাটি জানাজানি হলে গুরুদাসপুর থানায় অভিযোগ দেন ইতির বাবা আফাজ প্রামাণিক। এ নিয়ে গ্রামে সালিসও হয়। সালিসে অভিযুক্ত জুয়েল ও তার মা ২ লাখ টাকায় মীমাংসার প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে ইতির পরিবার।
ইতির শাশুড়ি নিলুফা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে রাগের বশবর্তী হয়ে ইতিকে গত ২২ জানুয়ারী তালাক দিলেও ১৫ মার্চ তারা পুনরায় বিয়ে করে।’
প্রথম বিয়েতে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর থাকলেও দ্বিতীয় বিয়েতে দেড় লাখ টাকা কেন—জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান নিলুফা।
বিয়ের কাজী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘তালাক এবং বিয়ের ঘটনা সত্য। আগে পরে কি হয়েছে, তা আমার দেখার বিষয় না।’
মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, ‘ইতিকে তালাক দেওয়ার কোনো কাগজ পাইনি। তালাকের কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদে কেন আসেনি সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কাজীকে নোটিশ করা হবে।’