জামাই-শ্বশুরের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুকুর মালিক

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
০৪ জুলাই ২০২৫, ১৭:০২
শেয়ার :
জামাই-শ্বশুরের মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুকুর মালিক

বড়াইগ্রামে স্বামী পুকুর থেকে মাছ চুরি করে ধরা পড়ায় লজ্জায় স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন (১৪) আত্নহত্যা করার অভিযোগ ছিল। কিন্তু ঘটনার এক মাস পর ওই পুকুর মালিকের বিরুদ্ধেই উল্টো আত্নহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন স্বামী সুরুজ মণ্ডল (২১)।

অপরদিকে, মেয়েকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্নহত্যা বলে প্রচার করার অভিযোগে স্বামী সুরুজ ও পুকুর মালিক মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেছেন সুমাইয়ার বাবা। এখন জামাই-শ্বশুরের পরস্পরবিরোধী তথ্যে দেওয়া দুটি মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে পুকুর মালিকই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আজ শুক্রবার সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের মাহবুব হোসেন দ্বারিকুশী বাবুপাড়ায় সুরুজ মণ্ডলের বাড়ি সংলগ্ন একটি পুকুর ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। কিন্তু মাঝে মধ্যেই পুকুর থেকে কে বা কারা মাছ চুরি করে নিয়ে যায়। সর্বশেষ গত গত ২১ মে মাহবুব গোপনে খবর পেয়ে লোকজনসহ সুরুজ মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে পুকুর থেকে চুরি করে আনা মাছ জব্দ করেন।

স্বামীর মাছ চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে সেদিনই লজ্জায়, অপমানে সুরুজের স্ত্রী সুমাইয়া ফাঁস নিয়ে আত্নহত্যা করেন। সে সময় স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। কিন্তু ওই ঘটনার এক মাস পরে গত ২২ জুন সুরুজ মণ্ডল আদালতে মাহবুবের নামে আত্নহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। 

অপরদিকে, সুমাইয়াকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে তার বাবা আ. করিম স্বামী সুরুজকে প্রধান আসামী করে পুকুর মালিক মাহবুবসহ কয়েকজনের নামে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুব।

এ ব্যাপারে চন্ডিপুর গ্রামের মাসুম হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম জানান, সেদিন মাহবুবের সঙ্গে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে পুকুর থেকে চুরি করা মাছ দেখতে পাই। ওই সময় অন্যায় হয়েছে স্বীকার করে সুরুজের মা বলেছিলেন, তার ছেলে রাতে মাছ চুরি করে বাজারে বিক্রি করেছে আর কিছু মাছ বাড়িতে রেখেছে। কিন্তু এরপর ওই রাতেই সুরুজের স্ত্রী আত্নহত্যা করেছে বলে খবর পাই। 

অভিযুক্ত সুরুজ মণ্ডল বলেন, ‘আমি মাছ চুরি করিনি, খাওয়ার জন্য দুই-একটা মাছ নিয়েছিলাম। পরে আমার স্ত্রী আত্নহত্যা করলে এলাকার লোকজনের নানান কথায় মামলা দিয়েছি। আমার শ্বশুর আমাকে প্রধান আসামি করে যে মামলা করেছেন, সে বিষয়ে যা বলার আদালতে গিয়ে বলবো।’

সুরুজ মণ্ডলের দায়ের করা মামলার স্বাক্ষী দ্বারিকুশী গ্রামের বাসিন্দা মো. বাবু মিয়া বলেন, ‘মামলায় আমাকে স্বাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না।’

অপর মামলার স্বাক্ষীরাও একই ধরণের কথা বলেছেন। 

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। এ মামলার তদন্তে প্রকৃত বিষয় জানা যাবে এবং আইন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’