রাজশাহীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে কথিত সাংবাদিক জুলুসহ গ্রেপ্তার ৩
রাজশাহী মহানগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকায় ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ত্রাস সৃষ্টির ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।
গত বুধবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত টিকাপাড়ার একটি বাড়ি ও আশেপাশের এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এদিন রাতেই গ্রেপ্তারকৃত ৩ জনকে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারকৃত ৩ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধারের প্রয়োজনে আসামিদের ১০ দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।
রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের অন্যতম হলেন টিকাপাড়া খুলিপাড়ার মৃত নজির শেখের ছেলে কথিত সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলু (৫১)। এই জুলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। এছাড়া অন্যদের মধ্যে জুলুর ছেলে নাজমুল ইসলাম জিম (২৭) ও ভাতিজা মনা ইসলাম (২৩) রয়েছেন। মনা ইসলাম একই এলাকার আনসার আলীর ছেলে। জুলুর টিকাপাড়া খুলিপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী।
মামলা ও অভিযোগের সূত্রে আরএমপির গণমাধ্যম শাখার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই বিকেলে পাড়া মহল্লার বিরোধকে কেন্দ্র করে রামচন্দ্রপুর এলাকায় একটি সমঝোতা বৈঠক চলছিল। এ সময় কথিত সাংবাদিক জুলুসহ আসামিরা সিয়াম ইসলাম নামের এক যুবকের ওপর সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালান। আসামিরা জিআই পাইপ দিয়ে সিয়ামকে বেধড়ক আঘাত করেন এবং তাকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালান। এছাড়া ছিনিয়ে নেওয়া হয় নগদ টাকা ও জিনিসপত্র। এক পর্যায়ে আসামিরা তাকে বৈঠক থেকে খানিকটা দূরে এনে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় সিয়াম কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় পার্শ্ববর্তী একটি ভবনের আড়ালে আশ্রয় নিলে আসামিরা তাকে লক্ষ্য করে ৪ রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন। এরপর এলাকাবাসী সংঘবদ্ধভাবে তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় আহত সিয়াম বুধবার রাতে আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে আটকের পর আসামিদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় আসামিরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তারা এলাকায় চাঁদাবাজি ধর্ষণ, অবৈধ অস্ত্র বহন, জুয়া পরিচালনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয়ে নজরুল ইসলাম জুলু নিজ এলাকা ছাড়াও আশেপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে নানাবিধ অপরাধ সংঘটনে ভুমিকা রেখে আসছেন। জুলুর নেতৃত্বে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ এলাকায় সক্রিয় রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এলাকাবাসীর শান্তি শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।
আদালতে দাখিলকৃত পুলিশের প্রাথমিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি জুলু তার নিয়ন্ত্রিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাজশাহী প্রেসক্লাব দখল করেন। তিনি অন্য সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব থেকে বের করে দিয়ে নিজেই নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। এরপর থেকে জুলু রাজশাহী প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। প্রেসক্লাবে একটি টর্চার সেল করে লোকজনকে ধরে এনে সেখানে নির্যাতনও করা হচ্ছিল। অনেকেই ভয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে সাহস করেননি।
পুলিশ আরও জানায়, জুলুর বিরুদ্ধে ১৫টি, তার ছেলে নাজমুল ইসলাম জিমের বিরুদ্ধে ২ টি ও জুলুর ভাতিজা মনা ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের ৭টি মামলা চলমান রয়েছে।
আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মোস্তাক আহাম্মেদ জানান, গুলি ছুঁড়ে ত্রাস সৃষ্টির হুকুমদাতা হিসেবে ছেলেসহ কথিত সাংবাদিক নজরুল ইসলাম জুলুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে ঢাকায় জুবাইদ নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে জুলুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। হত্যা মামলার আসামি নজরুল ইসলাম জুলুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মোহাম্মদপুর থানাকে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে আরএমপি।