রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কার্যক্রম তদারকির কঠোর নির্দেশনা

আবু আলী
০৪ জুলাই ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কার্যক্রম তদারকির কঠোর নির্দেশনা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম তদারকি জোরদার করতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, লোকসানি শাখার সংখ্যা হ্রাস, রেমিট্যান্স আহরণে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা, ঋণ বিতরণে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ করা, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঋণ অনুমোদনে কোনো রকম অনিয়ম হলে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে কারও শৈথিল্য প্রদর্শন প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ‘ইনোভেশন শোকেসিং’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা এসব নির্দেশনা দেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ ধরনের অনুষ্ঠান এটিই প্রথম।

জানা গেছে, বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত। যতই দিন যাচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে ঋণ হিসেবে নেওয়া লুটপাটের প্রকৃত চিত্র। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ ছাড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ

ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের প্রায় ৪৬ শতাংশ। খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

২০২৪ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা তৎকালীন সময়ের বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন গভর্নরের নেতৃত্বে জুন প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। তাড়াহুড়ো করে ওই সময় খেলাপির তথ্য প্রকাশ করায় প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা যায়নি।

এরপর নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ব্যাংকগুলোকে খেলাপির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশ দেন। এতে সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ৭৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। পরের প্রান্তিকে সরকারের কড়াকড়ির কারণে খেলাপি আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। আর গত মার্চ পর্যন্ত এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার নির্দেশে নতুন সরকারের আমলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি কোটি টাকা।