‘খাস কামরায়’ নিয়ে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রারের

ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি
০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:২২
শেয়ার :
‘খাস কামরায়’ নিয়ে ঘুষ দাবি সাব-রেজিস্ট্রারের

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ৩০ জুন সাব-রেজিস্ট্রারের বিশেষ কক্ষে (খাস কামরা) ঘটলেও জানাজানি হয় আজ বুধবার সকাল ৯টায় অফিস খুলার পর। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

মোশারফ হোসেন বালাগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত হলেও (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) সপ্তাহে দুইদিন দায়িত্ব পালন করেন ওসমানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কার্যালয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ওসমানীনগর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়মিত কোনো সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোশারফ হোসেন ওসমানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। এরপর থেকে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের জিম্মি করে জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন ও প্রকৃত বাজারমূল্য কম দেখিয়ে দলিল সম্পাদন করে কোটি-কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার সাব-রেজিস্ট্রারকে চাহিদা মতো ঘুষ না দেওয়ার ফলে দলিল রেজিস্ট্রি না করার অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার উসমানপুর গ্রামের (বর্তমান) সিলেট ভার্তখলা স্বর্ণালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মুহিব এহতেশাম। তিনি ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকায় নিজের ১১ শতক বাড়ি বিক্রি করেন একই গ্রামের মৃত আকলিছ মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়ার কাছে। গত মাসের ৩০ জুন দুপুর দেড়টায় শাহীন মিয়া রেজিষ্ট্রার অফিসে দলিল রেজিস্ট্রিরি করার জন্য পে-অর্ডারের মাধ্যমে সরকারি ফি জমা দেন। পরে অফিসে অতিরিক্ত আরো ২ শতাংশ ঘুষ প্রদান করে দলিল রেজিস্ট্রির জন্য উপস্থিত হন উপজেলার তাজপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে।

শাহীন মিয়ার দলিলটি সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন এজলাস কক্ষে পৌছার পর তিনি দলিলটি যাচাইকরণ করে কোনো ত্রুটি পাননি। দীর্ঘ যাচাইকরণের এক পর্যায়ে দলিল রেজিস্ট্রিতে অনিহা প্রকাশ করেন সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন। এতে শাহীন মিয়া ও তার মনোনীত মুহরী দলিল রেজিস্ট্রি না করার কারণ জানতে চাইলে তাদের ‘খাস কামরায়’ যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি। সেখানে যাওয়ার পর অফিসের ২ শতাংশসহ তাকে অতিরিক্ত ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার বায়না ধরেন।

অবশেষে দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন তারা। তাতেও সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রিতে রাজি না হলে ‘খাস কামরায়’ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ মারমুখী ভূমিকায় চলে যায়।

পরবর্তীতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্তিতি শান্ত করলেও দুইদিন আগের এই ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর উপজেলা রেজিস্ট্রি কমটেপ্লক্সজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেন ওসমানীনগরে দায়িত্ব পালনকালে প্রতি লাখে তিন হাজার টাকা প্রকাশ্যে ঘুষ গ্রহণ ও দলিল লেখকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। জনভোগান্তিরোধে অবিলম্বে এ সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারণ ও তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

দলিল রেজিস্ট্রি পক্ষের মনোনীত (মুহরীর) মো. মকবুল হোসেন জানান, দলিলে কোনো ত্রুটি না থাকার পরও সাব-রেজিস্ট্রার ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। দর কষাকষির পর দলিল রেজিস্ট্রিপক্ষ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তিনি ১ পয়সাও কম হবে না বলে অনড় থাকলে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।

পরে তিনি নিজেই পুলিশে কল দেন। পুলিশের সামনেই ঘুষের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। কাজের স্বার্থে বিভিন্ন সময় তিনি নিজে সাব-রেজিস্ট্রারকে অর্ধকোটি টাকার উপরে ঘুষ দেওয়ার দাবি করেন মো. মকবুল হোসেন।

জমি ক্রয়কারী শাহিন মিয়া বলেন, ‘বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে। আগামী সোমবার দলিল রেজিস্ট্রি করা হবে।’

এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মোশারফ হোসেনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল ও হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও ফিরতি জবাব পাওয়া যায়নি। পরে অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান তিনি।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে একটি পক্ষের উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখানেই বিষয়টি সমাধান হলে কেউ আর অভিযোগ দেয়নি।’

জেলা রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারী ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। অতিরিক্ত ঘুষ প্রহণের দাবিটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’