তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ব্যাপক দূর্নীতি ইতোমধ্যে কমিটির তদন্ত রিপোর্টে অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভেড়ামারা সোনালী ব্যাংকের সাধারণ তহবিল হতে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন এবং ছাত্র আদায়কৃত অর্থ ব্যাংকে সঠিক ভাবে জমা দেওয়া হয় না। এ সকল প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
প্রধান শিক্ষক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির বিপরীতে ২৪৯০৬৮ টাকার টিউশনফি আত্মসাৎ করার প্রমাণ মিলেছে। তদন্ত কমিটির নিকট অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে কোনো প্রকার ডকুমেন্টস দেখাতে সমর্থ্য হননি এবং এ সংক্রান্ত আর্থিক ব্যয় ক্যাশবুকে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করাও হয়নি।
এছাড়া ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে অসংগতি রয়েছে এবং এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতেও সমর্থ্য হননি তিনি।
তাছাড়া উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে থেকে বেতন উত্তোলন। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বেতন গ্রহণ করে কী কী খাতে ব্যয় করেছেন, তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা এবং ব্যয় প্রধান শিক্ষক দেখাতে সমর্থ্য হন নি। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন নেওয়া হয়েছে বলা হলেও এ সংক্রান্ত কোনো কার্যবিবরনী দেখাতে পারেননি।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নামে ভেড়ামারা জনতা ব্যাংকের এফডিআর ভাঙ্গার পর অর্থ আত্মসাৎ করেন প্রধান শক্ষিক। বিদ্যালয়ের নামীয় জনতা ব্যাংকে রক্ষিত এফডিআর এর ৬৪,০০০/- টাকা গত ০৪ আগস্ট ২০১৯ তারিখে উত্তোলন করে পরবর্তীতে ৫০,০০০ টাকা ব্যাংকে এফডিআর হিসেবে জমা দেন। অবশিষ্ট ১৪,০০০ টাকা অন্য খাতে ব্যয় করলেও তার প্রমাণাদি দিতে ব্যর্থ হন তিনি।
ভেড়ামারা সোনালী ব্যাংকে বিদ্যালয়ের নামে সোনালী ব্যাংকে একটি সাধারণ তহবিল রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় ভিন্ন সময়ে উত্তোলিত টাকার বিপরীতে বিল ভাউচার দেখাতে সমর্থ হননি এবং সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করতে পারেননি তিনি।
আরও জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক ল্যাপটপ, ট্যাব, ২টি ওয়েট মেশিন, ২টি ফ্যান, ১০ টি চেয়ার, বেজ, অনুবিক্ষনযন্ত্র, বিপি মেশিন ইত্যাদি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন।
বিদ্যালয়ের ল্যাপটপ, ট্যাব, চেয়ার এবং বেঞ্চ নিজের হেফাজতে রেখেছেন এই প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকারোক্তি দেন বলে জানা যায়।
প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে এই সকল সরঞ্জামের হিসাব হতে দায়মুক্তির সুযোগ নেই কোনো মতেই বলে জানালেন বিদ্যালয়ের সভাপতি।
আরও অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জে.এস.সি ও এস.এস.সি পরীক্ষার মূল সনদ বিতরণে জোরপূর্বক ভুয়া রসিদের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের ৩০০ এবং ৩৫০ টাকা হারে আদায় করতেন। এই আয় তিনি নিয়মিত সাধারণ তহবিলে প্রদান করতেন না এবং এই ব্যয়ের কোনো ভাউচার দেখাতে সমর্থ্য হননি। ষ্টোরে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সরেজমিন পরিদর্শনে সততা স্টোরের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চন্ডিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভার প্রাপ্ত সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রিফকুল ইসলাম জানান, অচিরেই ওই শিক্ষকের অন্যায় অব্যবস্থাপনার জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।