দুদিনের এই পরবাসে সৈয়দ আব্দুল হাদীর ৮৫তম জন্মদিন আজ
‘এই পৃথিবীর পান্থশালায় গাইতে গেলে গান, কান্না হয়ে বাজে, কেন বাজে আমার প্রাণ...। প্রথম অন্তরার শুরুটা ছিল এমনÑ ‘কেউ চলে যায়, কেউ বা আসে দুদিনের এই পরবাসে...।’ সত্তরের দশকের শুরুতে আবু হেনা মোস্তফা কামালের কথায় কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী গেয়েছিলেন ‘এই পৃথিবীর পান্থশালা’ গানটি। মানুষের জীবন সত্যিই একটা পান্থশালা। দুদিনের জন্য আসে, আবার চলে যায়! গানে এই ভাবনাই তুলে ধরেন গীতিকবি। দীর্ঘ সংগীতজীবন, বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। আজ গুণী এই শিল্পীর ৮৫তম জন্মদিন। আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।
১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এর পর বেড়ে ওঠেন আগরতলা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কলকাতায়। তবে তার কলেজজীবন কেটেছে রংপুর আর ঢাকায়। শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে ১ জুলাই সকাল ৭টার সংবাদের পর চ্যানেল আইয়ে সম্প্রচার হবে বিশেষ পর্ব। এ অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া জনপ্রিয় গান পরিবেশন করবেন এ প্রজন্মের শিল্পী মহারাজা, আলাউদ্দিন এবং শানু। অনুষ্ঠানে সৈয়দ আব্দুল হাদীর ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র এবং শুভানুধ্যায়ীদের শুভেচ্ছা থাকবে।
সৈয়দ আব্দুল হাদীর বাবা ছিলেন সিভিল সার্ভিস অফিসার। বাবা গান গাইতেন আর কলেরগানে গান শুনতে পছন্দ করতেন। বাবার শখের গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে কৈশোরে তিনি সংগীত অনুরাগী হয়ে ওঠেন। ছোটবেলা থেকে গাইতে গাইতে গান শিখেছেন।
১৯৫৮ সালে সৈয়দ আবদুল হাদী ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনি লন্ডনে ওয়েল্স ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংগীত পরিবেশন করছেন। ১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে সৈয়দ আবদুল হাদী একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। সিনেমার নাম ছিল ‘ডাকবাবু’। মো. মনিরুজ্জামানের রচনায় আলী হোসেনের সুরে একটি গানের মাধ্যমে সৈয়দ আবদুল হাদীর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু।
বেতারে গাওয়া তার প্রথম জনপ্রিয় গান ‘কিছু বলো, এই নির্জন প্রহরের কণাগুলো হৃদয়মাধুরী দিয়ে ভরে তোলো।’ সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রের গানে সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন লাকী আখ্ন্দ। এই চলচ্চিত্রে গেয়েছেন ‘সখি চলনা, সখি চলনা জলসা ঘরে এবার যাই।’ গানটি শ্রোতাপ্রিয় হয়।
সৈয়দ আব্দুল হাদীর জনপ্রিয় গানের সংখ্যা অসংখ্য। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑ ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’, ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘এই পৃথিবীর পান্থশালায়’, ‘চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘কারও আপন হইতে পারলি না অন্তর’, ‘কেউ কোনোদিন আমারে তো’, ‘যেও না সাথী’, ‘শূন্য হাতে আজ এসেছি’, ‘দুঃখ চির সাথীরে’, ‘সখি চলনা জলসা ঘরে যাই’, ‘আমি তোমারই প্রেম ভিখারি’, ‘চক্ষের নজর এমনি কইরা’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো’, ‘চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার’, ‘তোমাদের সুখের এই নীড়ে’, ‘আউল বাউল লালনের দেশে’, ‘বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয়’, ‘এ জীবনে তুমি ওগো এলে’, ‘মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে’ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। প্রথমবার পেয়েছিলেন ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রের জন্য। এরপর সুন্দরী ১৯৭৯, কসাই ১৯৮০, গরীবের বউ ১৯৯০, ক্ষমা ১৯৯২। ২০০০ সালে সংগীতে অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক লাভ করেন।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা