চুরির অপবাদে পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চুরির অপবাদে কারখানার ভেতরে হাত-পা বেঁধে রাতভর পিটিয়ে পোশাকশ্রমিক হৃদয়কে (১৯) হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একই কারখানার শ্রমিক হাসান মাহমুদ মিঠুকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিহত হৃদয় টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার শুকতার বাইত গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি ওই কারখানায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে গত শনিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে কারখানার শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওতে দেখা যায়, হৃদয়কে কারখানাটির ভিতরের একটি কক্ষে জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে হৃদয়ের মুখ এবং নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পাশে থাকা কয়েকজন যুবক কে বলতে শোনা যায় ‘এত করে পিটাইলাম, তাও কিছু হয় নাই’। এরপর তারা পুনরায় হৃদয়কে টেনে-হিঁচড়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ভুক্তভোগী হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারতেছিল না।
এ ঘটনায় গত শনিবার হৃদয়ের বড় ভাই লিটন বাদী হয়ে কোনাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে গতকাল রবিবার হাসান মাহমুদ নামে কারখানাটির এক শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে কোনাবাড়ির গ্রিনল্যান্ড কারখানায় ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিল হৃদয়। কারখানা থেকে ছুটি শেষে বাড়ি না ফেরায় গত শনিবার বিকালে নিহতের ভাই ও মা কারখানায় গিয়ে জানতে পারেন হৃদয়কে চুরির অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। এ সময় তারা আরো জানতে পারেন, হৃদয়ের লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেলে রয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা হৃদয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
লিটন অভিযোগ করে বলেন, ‘গ্রীনল্যান্ড কারখানার ভিতরে হৃদয়কে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি ধামাচামা দেওয়ার জন্য হৃদয়ের লাশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্টারের তথ্য অনুযায়ী, হৃদয়ের মৃত্যু হাসপাতালে নিয়ে আসার পূর্বেই হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘পোষাক কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হই, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে এই ঘটনা সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে একজনকে গ্রেপ্তার করি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’