দাম বৃদ্ধির গুজবে জালানি তেল মজুদের অভিযোগ
চাহিদা অনুযায়ী অকটেন পাচ্ছেন না গ্রাহকরা ।। অপরিবর্তিত রেখে জুলাই মাসের দাম ঘোষণা
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পেট্রলপাম্প থেকে গতকাল রবিবার সকালে খবর আসে গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী অকটেন পাচ্ছেন না। খবরটি যাচাইয়ে রাজধানীর কয়েকটি পেট্রলপাম্প মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কয়েকজন জানান, ডিজেল বা অন্যান্যা জ¦ালানি তেলের তুলনায় অকটেনের মজুদ কম আছে। একজন জানান, শুক্র ও শনিবার ডিপোগুলোতে তারা তেল মজুদ করতে পারেননি। ফলে রবিবার সকালে কোনো কোনো পাম্পে সংকট হয়ে থাকতে পারে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে জুলাইয়ে তেলের দাম বাড়বে- এমন গুজবে বিভিন্ন পেট্রলপাম্প মালিকরা জ¦ালানি তেল মজুদ করা শুরু করেছেন। এতে জ্বালানি তেল, বিশেষ করে অকটেনের সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বিপিসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তারা আমাদের সময়কে বলেন, এমন খবর আমরাও পেয়েছি। দেশে প্রতিমাসেই জ¦ালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের কারণে জুলাই মাসে তেলের দাম বাড়তে পারে- এমন গুজব কোনো একটি মহল থেকে ছড়ানো হয়েছে। এমন গুজবে বিভিন্ন পেট্রলপাম্প মালিকরা জ্বালানি তেল স্টক করা শুরু করেছে, বিশেষ করে অকটেন। কর্মকর্তারা জানান, এমনিতেই অকটেনের রিজার্ভ একটু কম আছে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই এটি কেটে যাবে। জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিতে অকটেন থাকলেও বিক্রি করতে চাইছেন না, এমন খবর আমরা পেয়েছি। সামগ্রিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দাম অপরিবর্তিত রেখে জুলাই মাসের জ্বালানি তেলের দাম ঘোষণা করে দিয়েছে জ¦ালানি বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল হক আমাদের সময়কে বলেন, কোনো কোনো পাম্পে অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না, এমন খবর আমরাও পেয়েছি। যারা এমন করছে হয়তো তাদের পাম্পে ছিল না। আবার দুইদিন সরকারি বন্ধের কারণেও কোনো কোনো পাম্পে রিজার্ভ কম থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ পাম্পেই পাওয়া যাচ্ছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, সাধারণত দেশে প্রতিদিন ১২শ টন অকটেনের চাহিদা থাকে। আর দেশে অকটেনের রিজার্ভ থাকে ১৭ দিনের। ইরান-ইজারায়েল যুদ্ধের প্রভাবে একটি অকটেনের জাহাজ সময়মতো আসতে পারেনি। ফলে রিজার্ভ এসে ঠেকেছে ৮ দিনে। অন্যদিকে, জুলাই মাসে তেলের দাম বাড়তে পারে এমন খবরে অনেক পাম্প মালিকরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ অকটেনের চাহিদা দিয়েছে ডিপোগুলোতে। তবে বিপিসি থেকে বলা হয়েছে, প্রতিমাসে পেট্রলপাম্পগুলো যতটুকু নেয় তার বেশি যাতে দেওয়া না হয়।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, মূলত দাম বাড়তে পারে- এমন অনুমান থেকেই অনেকে বেশি তেল ক্রয়ের চেষ্টা ও মজুদের চেষ্টা করেছিল। যে কারণে জ্বালানি বিভাগ থেকে একদিন আগেই দাম অপরিবর্তিত রেখে জুলাই মাসের দাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিপিসি সুত্র জানায়, দেশে অকটেনের যে চাহিদা, তা দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তবে দেশে অকটেন উৎপাদনের প্লান্টগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কোনো কোনো প্ল্যান্ট বন্ধ। ফলে অকটেন আমদানি করতে হচ্ছে। আগামী ২ জুলাই ২৪ হাজার মেট্রিক টন অকটেন নিয়ে একটি জাহাজ দেশে ভিড়বে। এতে জ¦ালানি তেলের সংকট হবে না।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম জুলাই মাসে অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ চলতি জুন মাসের দামেই আগামী মাসে মিলবে এসব জ্বালানি তেল। গতকাল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। এর আগে চলতি (জুন) মাসের জন্য গরিবের জ্বালানি হিসেবে পরিচিত কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২ টাকা কমিয়ে ১০২ টাকা এবং অকটেন ও পেট্রলের দাম ৩ টাকা করে কমিয়ে যথাক্রমে ১২২ টাকা ও ১১৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানা গেছে, বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত বছরের মার্চ থেকে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ করে আসছে সরকার। সে হিসেবে প্রতি মাসে নতুন দাম ঘোষণা করছে সরকার। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পাশাপাশি কোনো কোনো মাসে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আবার কোনো মাসে বেড়েছে।
গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১০৪ টাকা থেকে এক টাকা বাড়িয়ে ১০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ছাড়া এক টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ১২৬ টাকা এবং পেট্রল ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মার্চ ও এপ্রিলে তেলের দাম ছিল অপরিবর্তিত। মে মাসে সেই দাম লিটারপ্রতি ১ টাকা করে কমানো হয়।
এর আগে গত বছরের ৩১ আগস্ট প্রথমবার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে অন্তর্বর্তী সরকার। তখন সেপ্টেম্বর মাসের জন্য পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে ৬ টাকা এবং প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ১ টাকা ২৫ পয়সা করে কমানো হয়। আর অক্টোবর মাসে দাম নির্ধারণে নভেম্বরে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন দাম ৫০ পয়সা করে কমিয়ে ১০৫ টাকা করা হলেও অপরিবর্তিত রাখা হয় পেট্রোল ও অকটেনের দাম। এ ছাড়া ডিসেম্বরের শেষ দিন মূল্য সমন্বয়ের ঘোষণায় এক টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০৪ টাকা। আর আগের মতো পেট্রল ১২১ টাকা এবং অকটেন ১২৫ টাকা রাখা হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভর্তুকির চাপ এড়াতে ২০২২ সালের আগস্টে গড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয় জ্বালানি তেলের দাম। এর পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৩ দিনের মাথায় সব জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয়।