ষাট বছরের আমিরে ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে

সিতারে জমিন পার

মাজেদ হোসেন টুটুল
২৯ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ষাট বছরের আমিরে ঝড় উঠেছে বিশ্বজুড়ে

কিছুটা হলেও নিজেকে ফিরে পেলেন বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খান। একই সঙ্গে ফিরে পেলেন হারাতে বসা আত্মবিশ্বাস আর হৃত গৌরব। ২১ জুন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সিতারে জমিন পার’। আর ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কিছু মানুষের সফল হওয়ার উদগ্র বাসনা নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি দিয়ে ষাট বছর বয়সে আবারও সাড়া ফেলতে চলেছেন বিশ্ব সিনেমার ভুবনে।

এই এক সপ্তাহে সিনেমাটি এখন পর্যন্ত ১১৩ কোটি রুপি আয় করেছে। এর মধ্যে শুধু ভারতেই আয় শতকোটির ঘরে।

আমির খান এমন একজন অভিনেতা, যার প্রতিটি শট আর ডায়ালগ নিখুঁত হওয়া চাই। একেবারে পারফেক্ট বলতে যা বোঝায়। তার সিনেমা যেমন হাসাতে পারে, তেমনই পারে কাঁদাতে। সব সময় পর্দায় তার চেষ্টা থাকে কিছু শেখাতে, থাকে মানবতাবোধে একাত্ম হওয়ার বার্তা। সেই চেষ্টা তিনি নিয়মিত করে যাচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার এই প্রচেষ্টা সফল হয়। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’।

১৯৭৩ সালে ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’-এ শিশুশিল্পী হিসেবে শুরু। আর পেশাগত অভিনয়জীবনের সূচনা ‘হোলি’ (১৯৮৪) দিয়ে। তবে বাণিজ্যিক ঘরানার প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ দিয়েই ১৯৮৮ সালে জানান দেন, পর্দার রাজা হতেই তার আগমন। একে একে ‘দিল’, ‘দিল হে কে মানতা নেহি’, ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’, ‘রঙ্গিলা’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’সহ বেশকিছু সিনেমা দিয়ে আলোড়ন তোলেন। পরে ‘ইশক’, ‘সারফারোস’ ‘দিল চাতা হ্যায়’, ‘রং দে বাসন্তী’, ‘লাগান’, ‘থ্রি ইডিয়ট’, ‘পিকে’, ‘গাজিনি’তে অনবদ্য অভিনয় করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। প্রতিটি সিনেমাতেই তিনি নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করেন। ২০১৬ সালে ‘দঙ্গল’ সিনেমায় যেভাবে নিজেকে ভেঙেছেন আবার গড়েছেন, তা বলিউড অঙ্গনে বিরল। বলিউডের সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হিসেবে ‘দঙ্গল’ রেকর্ড গড়ে, যা এখনও অটুট। আমির খান ফিল্মফেয়ারসহ অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। হিন্দি সিনেমায় অনন্যসাধারণ অবদান আর ব্যতিক্রমী ভূমিকার জন্য ভারত সরকার তাকে ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী এবং ২০১০ সালে পদ্মভূষণ পদকে সম্মানিত করে। একজন অভিনেতার জন্য এ যেন অভাবনীয়।

দর্শক-সমালোচক থেকে শুরু করে সব শ্রেণির সিনেপ্রেমীর হৃদয় জিতে নেন অসাধারণ অভিনয় আর নিত্যনতুন চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে। তবে দঙ্গলের বিশাল সাফল্যের পরই আমিরের জীবনে নেমে আসে হতাশা আর ব্যর্থতা। ক্যারিয়ারে দেখা দেয় ভাটার টান। বক্স অফিসে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয় ‘থাগস অব হিন্দুস্তান’ ও ‘লাল সিং চাড্ডা’। হলিউডের ‘ফরেস্ট গাম্প’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০১৯ সালে বানিয়েছিলেন ‘লাল সিং চাড্ডা’। সেই সিনেমার ব্যর্থতায় মুষড়ে পড়েন। সাময়িক বিরতি নেন কাজ থেকে। অবশেষে স্বরূপে ফিরলেন তিনি।

সোনালি সময় ফেরাতে তিনি বেছে নেন ২০০৭ সালের সাড়া জাগানো সিনেমা ‘তারে জমিন পার’-এর সিক্যুয়াল নির্মাণে। সেই প্রেক্ষাপটে ২১ জুন ‘সিতারে জমিন পার’ পর্দায় আসার পর চার দিনেই তুলে নেয় ১০০ কোটি রুপি। আমির খানকে ‘তারে জমিন পার’-এ ডিসলেক্সিয়ায় আক্রান্ত দশ বছর বয়সী এক বালকের জীবনের বাঁকবদলে সাহায্য করতে দেখা গিয়েছিল। সেই গল্পের ভিন্ন আঙ্গিকেই তৈরি হয়েছে ‘সিতারে জমিন পার’। স্প্যানিশ ছবি ‘ক্যাম্পেনিয়নস’-এর রিমেক ‘সিতারে জমিন পার’। হিন্দি সিনেমার দর্শকের জন্য এটি একটি অনন্য গল্প। এতে ডাউন সিনড্রোমের শিকার মানুষ কীভাবে দিন যাপন করে আর নিজেদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে তুলে ধরেÑ সে কাহিনিই দেখানো হয়েছে।

২০২২ সালের পর আবারও বড়পর্দায় আমির খান কেমন করবেন- সেটা নিয়ে কানাঘুষা ছিল সিনেপাড়ায়। সব বিতর্ক আর দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে আমির খান ফিরলেন নব-উদ্যমে। ঢিমেতালে শুরু হলেও ‘সিতারে জমিন পার’ নিয়ে চলচ্চিত্র মহলে প্রবল উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে আর দর্শক উন্মাদনাও তুঙ্গে। ‘পাঠান’ দিয়ে ফিরেছিলেন শাহরুখ, ‘সিতারে জমিন পার’ দিয়ে ফিরলেন আমিরÑ বাকি রইল আরেক খান, সালমান। কী নিয়ে ফিরবেন

ভাইজান, আদৌ কি পারবেন হৃত গৌরব ফেরাতে? সময়ের কাছেই তোলা থাক উত্তর।