বীমাকারীর স্বার্থরক্ষায় আসছে অধ্যাদেশ

আবু আলী
২৭ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বীমাকারীর স্বার্থরক্ষায় আসছে অধ্যাদেশ

আর্থিক খাতে আস্থা ফেরাতে ‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য পলিসিধারীর দাবি যথাসময়ে নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা তথা স্বার্থ রক্ষা করা।

জানা গেছে, এর মাধ্যমে দুর্বল বীমা কোম্পানির সাময়িক মালিকানা নিতে পারবে সরকার। এরপর সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিতে পারবে। অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, বীমা কোম্পানি অবসায়ন, একীভূতকরণ বা তৃতীয় পক্ষের কাছে সম্পূর্ণ বা আংশিক শেয়ার বিক্রি করতে পারবে সরকার ও আইডিআরএ। বিদ্যমান বীমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী বা অন্য কর্মীদের অপসারণও করতে পারবে। এর ফলে আইডিআরএ দুর্বল বীমা কোম্পানিতে প্রশাসক নিয়োগ বা অন্য যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে বীমা কোম্পানির মালিকানা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির আগে এক বা একাধিক ব্রিজ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান গঠন করতে হবে। সাধারণভাবে এর মেয়াদ হবে দুই বছর। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর করা যাবে। প্রতিটি ব্রিজ বীমাকারী প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী নিয়োগ করা হবে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল গঠন করা হবে।

বিভিন্ন পক্ষের মতামতের জন্য আগামী সপ্তাহে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হবে। এরপর দ্রুততম সময়ে অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। বীমার খসড়া করা হয়েছে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের আলোকে। তবে ব্যাংকের ক্ষেত্রে শুধু আমানতকারীর ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে। আর এখানে শেয়ারধারক ও পাওনাদারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আর্থিক খাতে আস্থা ফেরানো এ অধ্যাদেশের অন্যতম লক্ষ্য। আর কোন বীমা কোম্পানি নিষ্পত্তি করা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে সম্পদের গুণগত মান যাচাই করে প্রকৃত অবস্থা উদ্ঘাটনের মাধ্যমে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, এ অধ্যাদেশের বিধান অনুযায়ী সরকার এবং কর্তৃপক্ষ রেজল্যুশনের অধীন কোনো বীমাকারীকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় আনার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। কর্তৃপক্ষ এক বা একাধিক শেয়ার হস্তান্তরের আদেশ দিতে পারবে। যেখানে হস্তান্তরগ্রহীতা সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি হবে। আবার গ্রাহক সুরক্ষায় একটি তহবিল হবে। বীমা প্রতিষ্ঠান নিষ্পত্তিতে এ তহবিল ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া বীমা খাতের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় একটি কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কাউন্সিলের উদ্দেশ্য হবে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বীমা খাতের পদ্ধতিগত সংকট চিহ্নিত করে তা সমাধান করা।

‘বীমাকারীর রেজল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য মো. আপেল মাহমুদ আমাদের সময়কে বলেন, বীমা রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়ার প্রাথমিক উদ্দেশ্য পলিসিধারীর স্বার্থ রক্ষা করা। সময়মতো দাবি নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা এর অন্যতম লক্ষ্য। বীমা খাতে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন ছিল না। এ অধ্যাদেশের ফলে আশু পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এর ফলে বীমা খাতে আস্থা ফিরে আসবে। তিনি আরও বলেন, আইডিআরএ সম্প্রতি বীমা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বল কোম্পানিগুলোর ওপর বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করেছে। অডিটের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দ্রুত বীমাদাবি নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। বীমাশিল্পে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।

আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, জারি হতে যাওয়া অধ্যাদেশের আলোকে রেজল্যুশন বা নিষ্পত্তির জন্য এরই মধ্যে সমস্যাগ্রস্ত ১৫টি বীমা কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। প্রাথমিকভাবে সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের সাময়িক মালিকানা নিতে পারে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বীমা আইন-২০১০ অনুযায়ী একটি পলিসির মেয়াদ পূর্তির পর কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানছে না অনেক কোম্পানি। ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানিতে ১১ লাখের বেশি গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার দাবি আটকে আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় যুক্তদের একটি অংশ এখন পলাতক। বিগত সরকারের সময়ে অনৈতিক বিভিন্ন সুবিধা নেওয়ার তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।

জানা গেছে, বিপুল পরিমাণ বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করা ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানির ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিন বছরের বিশেষ নিরীক্ষা করাচ্ছে আইডিআরএ। এ জন্য গত সপ্তাহে অডিট ফার্ম নিয়োগ করেছে কর্তৃপক্ষ। বীমা দাবি পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন মানদ-ের ভিত্তিতে খারাপ অবস্থায় পড়া এসব প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আইডিআরএর কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট জমা দিতে হবে।

এসব কোম্পানি হলো- সানফ্লাওয়ার লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন, সানলাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফ, বেস্ট লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, স্বদেশ লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, বায়রা লাইফ ও এনআরবি ইসলামিক লাইফ।