প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে হবে
ক্রমবর্ধমান দুর্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রমশ জটিল জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। গাবুরা, আশাশুনি এবং মহেশখালীর মতো এলাকার পরিবারগুলো বারবার দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে; অথচ বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের মাত্র ০.৫৬ শতাংশেরও কম অবদান বাংলাদেশের। কার্যকর জলবায়ু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য, প্রান্তিক মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কণ্ঠস্বরকে জাতীয় নীতি প্রণয়নে রূপান্তর করতে হবে এবং তা আন্তর্জাতিক জলবায়ু আলোচনায় ও বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের অভিজ্ঞতাগুলোই বিশ্বব্যাপী ন্যায়ভিত্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয়ভাবে প্রাসঙ্গিক জলবায়ু সমাধানের মূল চাবিকাঠি।
আজ বৃহস্পতিবার ‘জলবায়ুর প্রান্তে জীবন: সংগ্রাম, আশাবাদ ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের যৌথভাবে আয়োজন করে ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশ, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) এবং দৃক। অনুষ্ঠানে একটি নীতি-সংলাপ, বই প্রকাশনা, প্রদর্শনী এবং ৪৯টি জলবায়ু-সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রকল্পের উপর কৌশলগত ও প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দৌলতুন্নেছা বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগে আমাদের ঘরবাড়ি হারাই; আবার নতুন করে গড়ে তুলি, যদিও আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসে। যারা চলে যেতে পারে না, তারা নদীর এক তীর থেকে অন্য তীরে সরে যায়, শুধু টিকে থাকার জন্য। আমি এই জীবন অনেকদিন ধরে বেঁচে এসেছি, কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে ভবিষ্যৎ—আমার সন্তান ও নাতি-নাতনিরাও কি এই বোঝা বইবে?’
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আর দূরবর্তী হুমকি নয়—এটি প্রতিদিনকার বাস্তবতা। উপকূলীয় মানুষের কণ্ঠস্বর শুধু স্থানীয় দুর্যোগের গল্প নয়, এটি বৈশ্বিক অন্যায়ের দলিল। আমাদের নীতিমালায় এই অভিজ্ঞতাগুলোর প্রতিফলন থাকতে হবে এবং সেগুলোকে বৈশ্বিক ফোরামে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের এখনই একযোগে, সহানুভূতির সঙ্গে কাজ শুরু করতে হবে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত ১২টি গল্পে উঠে এসেছে যেসব মানুষ সবচেয়ে কম দায়ী, তারাই কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙন—এসব কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং জীবনের, জীবিকার এবং প্রজন্মের গল্প। আশাশুনির ভাঙা বাঁধ থেকে মহেশখালীর হারিয়ে যাওয়া বন পর্যন্ত প্রতিটি গল্প প্রতিধ্বনিত করে ক্ষতি, অভিযোজন এবং টিকে থাকার দৃঢ় সংকল্প।
ওক্সফ্যামম ইন বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘আশাশুনিতে বাঁধ ভেঙে গেলে বা কইখালীর পানিতে লবণ বেড়ে গেলে, মানুষ হাল ছেড়ে দেয় না—তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কতদিন এই চক্র চলবে? জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের এসব কণ্ঠস্বর ও তাদের বাস্তবতা শুনতে হবে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।’