ভুল রক্ত দেওয়ায় ৭ দিন পর রোগীর মৃত্যু

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
২৬ জুন ২০২৫, ১৪:৫০
শেয়ার :
ভুল রক্ত দেওয়ায় ৭ দিন পর রোগীর মৃত্যু

টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ারে ভুল রক্ত পুশ করার কারণে আব্দুর রউফ নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ‘ও’ পজেটিভ রক্তের বদলে এবি পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়। আর এই ভুলের কারণে সাতদিন ধরে রোগীর নানা ধরনের উপসর্গের যন্ত্রণার পর গতকাল রাত আড়াইটায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার ছেলে উজ্জল (রানা)। 

জানা যায়, দেলদুয়ার উপজেলার কৌপাখী গ্রামের মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুর রউফ। গত বুধবার আব্দুর রউফ নামে ব্যক্তি হাড়ের রোগসহ কয়েকটি রোগের উপসর্গ নিয়ে টাঙ্গাইল ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির দিন চিকিৎসক জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে রক্ত দেওয়ার জন্য স্বজনদের জানান। এরপর স্বজনরা ওই দিনে ও পজেটিভ রক্তের ডোনার খুঁজে হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংকে উপস্থিত করেন। ডোনার এবং রোগীর রক্ত ক্রস ম্যাচিং করে হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজি জানান রোগীর রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ।

তাৎক্ষণিক এ বি পজেটিভ রক্তের ডোনার খুঁজেন স্বজনরা। ওই দিনই সন্ধ্যায় এবি পজেটিভ রক্তের ডোনার এনে উপস্থিত করলে ল্যাব টেকনোলজি রক্ত সংগ্রহ করেন। চিকিৎসক সন্ধ্যার পর রোগীর শরীরে এবি পজেটিভ রক্ত পুশ করে। প্রায় ৪০ মিনিট রক্ত নালী দিয়ে রক্ত পুশ হয়। পুশ হওয়ার পরপরই রোগী নানা ধরনের উপসর্গে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসক রক্ত দেওয়া বন্ধ করে দেন। 

এরপর রোগীর বেগতিক অবস্থা দেখে চিকিৎসক টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে তাকে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসক রোগীর হিমোগ্লোবিন কম দেখে তাৎক্ষণিক রক্ত দেওয়ার জন্য স্বজনদের রক্তের ডোনার আনতে বলেন। তখন এবি পজেটিভ রক্তের ডোনার সেখানে উপস্থিত করলে তাদের রক্ত ক্রস ম্যাচিংয়ে দেখা যায় রোগীর ও পজেটিভ রক্ত ।  

এ সময় রোগীর স্বজনরা রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট দুই ধরনের পাওয়া এবং রোগীর শরীরে ভুল রক্ত পুশ হওয়ায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তারা ।

স্বজনরা জানিয়েছে, দুটি সরকারি হাসপাতালেই নানা অনিয়ম ও প্রশাসনের নেই কোন নজরদারি। ভর্তির পর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা রোগীকে ভুল রক্তের গ্রুপ শরীরে পুশ করে। এরপর রোগীর মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালে তাৎক্ষণিক রোগীকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন।  

রোগীর স্বজনরা বলছেন, চিকিৎসক ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করায় সারারাত জ্বর ঠাণ্ডা ঝাকুনি উঠে রোগী খুবই অনেক খারাপ হয়েছিল। এরপরে দ্রুত মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করেন।। তবে আমরা বুঝতে পারি রোগীর ভুল রক্ত পুশ করায় রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ।

রোগীর ছেলে উজ্জল (রানা) বলেন, রক্তদাতা ও রোগীর রক্তের ক্রস ম্যাচিংয়ে রোগীর ও পজেটিভ না হয়ে এবি পজেটিভ বলেছেন জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজি রঞ্জু। যার ফলে ও পজেটিভ রক্তদাতা চলে যান। এর পরবর্তীতে রোগীর জরুরি রক্ত প্রয়োজন হওয়ায় এবি পজেটিভ রক্তদাতা এনে ক্রস ম্যাচিং করে রোগীকে এবি পজেটিভ রক্ত পুশ করা হয়। 

এ অবস্থায় রোগীর রক্তের গ্রুপ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান । এরপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিনোভা হসপিটাল, এশিয়া ক্লিনিক, আল মোহনা হসপিটাল ও ক্লিনিকসহ আরও কয়েকটি ক্লিনিকে পরীক্ষা করানো হয়। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, এশিয়া হসপিটাল এবং আল মোহনা হসপিটালে ও পজেটিভ রিপোর্ট দেন। 

এদিকে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল এবং একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক মেডিনোভা এবি পজেটিভ রিপোর্ট দেয়।  

এছাড়াও ও পজেটিভ রক্ত দাতা শামীম বলেন ও পজেটিভ রক্ত দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছিলাম। ল্যাব টেকনোলজি রঞ্জু রোগীর সাথে ক্রস ম্যাচিং করে বলেন রোগীর রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ। 

মেডিনোভা ক্লিনিকের ল্যাব টেকনোলজি খায়রুজ্জামান বলেন, আমি রক্তের গ্রুপ আবারও পরীক্ষা করে দেখবো। আসলে বিষয়টা কি সেটা পরে জানাবো। এরপর আর তিনি জানাননি। 

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ল্যাব টেকনোলজিস্ট রঞ্জু বলেন, আমি বারবার রক্তের গ্রুপ ম্যাচিং করেছি। প্রতিবারই এবি পজেটিভ এসেছে। 

টাঙ্গাইল জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. সাদেকুর রহমান বলেন, আমরা দায় বেড়াতে পারিনা। তবে এটি ছিল পুরোপুরি হাসপাতালের টেকনোলজিস্টের ত্রুটি। 

তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেডিকেল কলেজের পরিচালক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভুল রক্ত পুশ করায় এখানে রক্তের ম্যাচিং বিষয়ে একজন ডাক্তার যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছেন। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে অন্যত্র নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।