ইতিহাসের নাম মাইকেল জ্যাকসন
তারকাখ্যাতির কোন উচ্চতায় পৌঁছালে নিজ দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে তৃতীয় বিশ্বের একজন শ্রমিকের কাছেও নিজের নাম পৌঁছে দেওয়া যায়? ডিসকো থেকে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত নিজের সৃষ্টিকে ছড়িয়ে দিতে কত দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া যায়? তিনি পেরেছিলেন। এ জন্যই তিনি মাইকেল জ্যাকসন। শুধু একটা নাম নয়, একটি ইতিহাস। অনেকেই বলে সংগীত অকৃতজ্ঞ শিল্প। কারণ সবাই শুধু শিল্পীকেই চেনে। যে গীতিকার বা সুরকার গান লেখেন, সুর দেন, তারা রয়ে যান পর্দার আড়ালে। জ্যাকসনের ক্ষেত্রে কথাটি সত্য নয়। বেশিরভাগ গানই নিজের লেখা, সুর করা। নাচের ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেছিলেন মুন ওয়াক, অ্যান্টি গ্র্যাভিটি লিনসহ অসংখ্য জনপ্রিয় মুদ্রা; যা তাকে শুধু একজন সংগীতশিল্পী নয়, নৃত্যশিল্পী হিসেবেও সমাদৃত করেছিল গোটা পৃথিবীতে। তুমুল জনপ্রিয় মার্কিন এই পপ গায়ক, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা ও ব্যবসায়ীর আজ ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। মাত্রাতিরিক্ত প্রপোফল সেবনে ২০০৯ সালের এই দিনে মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। মৃত্যুর দেড় দশক পার হয়ে গেলেও এখনও তাকে নিয়ে বিশ্বের অগণিত মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
জীবন মাইকেল জ্যাকসনকে হাত ভরে দিয়েছিল ঐশ্বর্য। পেয়েছিলেন ১৩টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। তার লাখো ক্যাসেট আর সিডি বিক্রি হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনিই বদলে দিয়েছিলেন সংগীতবিশ্বকে। তার কনসার্টগুলোও ছিল দেখার মতো। একদিকে জ্যাকসন গাইছেন, অন্যদিকে দর্শক-শ্রোতার দল পাগল হয়ে যাচ্ছে। কেউ উন্মাদের মতো আচরণ করছে, কেউ আবার উত্তেজনায় হয়ে যাচ্ছে অজ্ঞান! সত্যিই, এটা কেবল মাইকেল জ্যাকসন বলেই সম্ভব হয়েছে। মাইকেল জ্যাকসন দাঁড়িয়েছিলেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধেও। তবে মৃত্যুর ১০ বছর পর এই পপতারকাকে নোংরাভাবে তুলে ধরা হয় একটি তথ্যচিত্রে। তার বিরুদ্ধে শিশু নিপীড়নের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় ‘লিভিং নেভারল্যান্ড’ তথ্যচিত্রটি। জ্যাকসন তত্ত্বাবধায়ক এবং অগণিত ভক্ত তখন জানান, শুধু তার সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য বহু বছর আগে মীমাংসিত একটি ঘটনাকে পুনরায় সামনে নিয়ে আসে এইচবিও। তথ্যচিত্রটি টেলিভিশনে প্রচারের পর থেকে মাইকেল জ্যাকসনের গান অনলাইনে বিক্রি ও শোনায় ভাটা পড়ে। তবে এত কিছুর পরও ভক্তদের মনের মণিকোঠায় তিনি আছেন আগের মতোই। বৈচিত্র্যময় জীবনই তাকে এনে দিয়েছে অমরত্ব।
দুরন্তপনা
১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন মাইকেল জ্যাকসন। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। শৈশবে ভাই-বোনদের সঙ্গে দুরন্তপনা করেই কেটেছে তার সময়। বোন লা টয়াকে জ্বালাতন করতে প্রায়ই বিছানায় মাকড়সা ছেড়ে দিতেন এই পপতারকা।
কৌতুকপ্রিয়
মাইকেল জ্যাকসন কৌতুক খুবই পছন্দ করতেন। জনপ্রিয় কমেডি সিরিজ ‘দ্য থ্রি স্টুজেস’-এর বিশাল ভক্ত ছিলেন তিনি।
কাতুকুতুতে কাবু
কাতুকুতুর মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল মাইকেল জ্যাকসনের। কাতুকুতু দিয়ে খুব সহজেই তাকে কাবু করে ফেলা যেত।
বই পড়–য়া
মাইকেল জ্যাকসনের বই পড়ার ভীষণ অভ্যাস ছিল। শৈশবে তার পছন্দের দুটি বই ছিল- ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ এবং ‘রিপ ভ্যান উইংকেল’।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
শখ ছিল সাপের প্রতি
সাপের প্রতি শখ ছিল মাইকেল জ্যাকসনের। উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিশালাকৃতির ও ভয়ংকরপ্রকৃতির সাপ বোয়া কন্সট্রিক্টর ছিল তার কাছে। এটির নাম রেখেছিলেন মাসলস। এ ছাড়া ক্রাশার নামে একটি অজগরও ছিল।
বিরল রোগ
১৯৯৩ সালে মাইকেল জ্যাকসনের বিরল চর্মরোগ ভিটিলিগোর কথা জানান তার ত্বক বিশেষজ্ঞ। মাত্র ১-২ শতাংশ মানুষ এ রোগে ভোগে। এ রোগের কারণে ত্বকের কোষের স্বাভাবিক রঞ্জনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
ঘুমের জন্য অক্সিজেন চেম্বার
অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমাতেন মাইকেল জ্যাকসন। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু পাওয়ার জন্য তিনি এ পন্থা বেছে নিয়েছিলেন। এ পপসম্রাট একবার দাবি করেছিলেন, অক্সিজেন চেম্বারে ঘুমানোর জন্য অন্তত ১৫০ বছর বাঁচবেন।
অনীহা
মাইকেল জ্যাকসনের ডাক নাম ছিল ওয়াকো জ্যাকো। কিন্তু নামটি খুবই অপছন্দ করতেন তিনি।
গ্র্যামি রেকর্ড
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
১৯৮৪ সালে আটটি গ্র্যামি পুরস্কার অর্জন করে রেকর্ড গড়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। এক আসরে এতগুলো গ্র্যামি পুরস্কার ঝুলিতে ভরার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি আর কোনো সংগীতশিল্পী। জীবদ্দশায় মোট ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছিলেন এ পপতারকা।
‘মিনি মাউস’ জ্যাকসন
১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ড ‘দ্য জ্যাকসন ফাইভ’। ব্যান্ডটির সদস্য ছিলেন মাইকেল জ্যাকসন ও তার চার ভাই। শুরুর দিকে ব্যান্ডটিতে নিজের কণ্ঠকে মিনি মাউস চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি।
হলিউড ওয়াক অব ফেমে দুটি তারা
হলিউড ওয়াক অব ফেমে ঠাঁই পেয়েছে মাইকেল জ্যাকসনের নামে দুটি তারা। একটি তার নিজের জন্য, আরেকটি জ্যাকসন ফাইভ ব্যান্ডের সদস্য হিসেবে।
‘থ্রিলার’ অ্যালবামের সাফল্য
১৯৮২ সালের ৩০ নভেম্বর মুক্তি পায় মাইকেল জ্যাকসনের ষষ্ঠ একক ‘থ্রিলার’। অ্যালবামটি ইউএস বিলবোর্ড চার্টে টানা ৩৭ সপ্তাহ শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল। সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া অ্যালবামের রেকর্ডও গড়েছে এটি। বিশ্বব্যাপী অ্যালবামটির ৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
প্রিসলিকন্যার সঙ্গে ১৯ মাসের সংসার
‘কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ এলভিস প্রিসলির একমাত্র মেয়ে গায়িকা লিসা মেরি প্রিসলিকে বিয়ে করেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন। কিন্তু মাত্র ১৯ মাসের মাথায় তাদের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
খাবারপ্রীতি
মেক্সিকান খাবার খুবই পছন্দ করতেন মাইকেল জ্যাকসন।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব : ১৯৯৭ সালে এক জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন।
জ্যাকসনভক্তের আত্মহত্যা
১৯৮৪ সালে আত্মহত্যা করেন মাইকেল জ্যাকসনের এক ভক্ত। কারণটা ছিল বেশ অদ্ভুত! ওই ভক্ত প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে পছন্দের শিল্পীর মতো চেহারা পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় হতাশা ও দুঃখে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি।