গুমে জড়িতরা চাকরিতে থাকলে নিরাপত্তায় ঝুঁকি

সাজ্জাদ মাহমুদ খান
২৫ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
গুমে জড়িতরা চাকরিতে থাকলে নিরাপত্তায় ঝুঁকি

গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চাকরিতে বহাল থাকলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ এসব সদস্য নিজের অপরাধ আড়াল করতে শত্রুপক্ষের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে স্পর্শকাতর তথ্য তুলে দিতে পারে। এতে জাতীয় নিরাপত্তাও বিপন্ন হতে পারে।

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ : আ স্ট্রাকচারাল ডায়াগনসিস অব এনফোর্সড ডিজ-অ্যাপিয়ারেন্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে গুম কমিশন। এতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার করার পর বাংলাদেশি ভুক্তভোগীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভারতের হাতে তুলে দেয় র‌্যাব। এ ছাড়া গুম হওয়া ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করতে নির্জন স্থানে নিয়ে যেতেন। গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন বিশ্লেষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় আঁকা ছবি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে এসেছে যে, তারা গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের জবাবদিহির আওতায় আনা একদিকে নজিরবিহীন, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএর উদাহরণ টেনে বলেন, সিআইএ বহু বিতর্কিত বা অবৈধ অপারেশনে জড়িত ছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগত সিদ্ধান্তের কারণে সিআইএর ডিরেক্টরদের আইনি শাস্তি দেওয়ার উদাহরণ বিরল। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের বিচারের মুখোমুখি করা একটি অস্বাভাবিক ও অন্যায্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।

গুম কমিশনের প্রতিবেদন বলছে, যেসব ব্যক্তি গুমের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন না, তারাও এখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। যাদের বিরুদ্ধে বৈধ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল, তাদের পলায়নে সহায়তা করে এই ব্যক্তিরা নতুন করে অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি আরও গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গুম কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ একদিকে যেমন নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তেমনি অন্যদিকে একটি রাজনৈতিক বয়ান গড়ে তোলে যে, বাংলাদেশে ইসলামি চরমপন্থার উত্থানের বিরুদ্ধে একমাত্র তারা কার্যকর শক্তি।

ভারতের হেফাজত থেকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে কিংবা বাংলাদেশের হেফাজত থেকে ভারতের কাছে বন্দিদের হস্তান্তর করা হয়েছিল বলে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, একজন বাংলাদেশি ভুক্তভোগীকে ভারতে আটক করা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ গোয়েন্দা সংস্থা একটি প্রশ্নপত্র পাঠায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে উত্তরগুলো আবার বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরে সেই ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বছরের পর বছর ধরে গুম করে রাখা হয়।

অপর এক ভুক্তভোগী বর্ণনা করেন, তাকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে পরে তাকে ভারতীয় মুসলমানদের নিয়ে ভিডিও কনটেন্ট পোস্ট করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভারতে তাকে তিন মাস বন্দি করে রাখা হয়। ভারতে পাঠানোর বর্ণনায় ভুক্তভোগী বলেন, ‘হায়েস গাড়িতে করে নিয়ে গেছিল, চোখ বেঁধে। বর্ডারে দুইটা লোক আইছিল, হোন্ডায় করে। বলল, ‘এরা তোরে পার করে দেব। তার পরে তুই ওই জায়গায় কতদিন থাকবি। এরপর আবার আমরা তোকে ব্যাক নিয়ে আসবো।’