ঢামেক শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ঢামেক শিক্ষার্থীদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

আন্দোলনরত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে অনড় রয়েছেন। একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ঢামেক কর্তৃপক্ষ হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও শিক্ষার্থীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আজ সোমবার দুপুর ১২ মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ছাত্রাবাস পরিদর্শন করে সমাধান দিতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢামেক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলনের এ ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন আব্দুল্লাহ আল নোমান ও তৌহিদুল ইসলাম তানভীর।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিজ দপ্তরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, পরিত্যক্ত ভবন ছাড়াও ছাত্রদের থাকার মতো সিট রয়েছে। কিন্তু সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এক রুমে দু-তিনজনের বেশি থাকতে রাজি নন। অথচ মিলেমিশে থাকলে পরিত্যক্ত ভবন ও গণরুম ছাড়াই সব শিক্ষার্থীরাই সুন্দরভাবে থাকতে পারে। সমস্যা সিনিয়রদের সিট দখল।

আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আজ আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। জানতে চেয়েছি, হলত্যাগের নোটিশ ও ভবিষ্যৎ সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে। আমরা বলেছি, হল ছাড়ব না। কর্তৃপক্ষ ৫ দফা দাবির অগ্রগতির বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট রূপরেখা দিতে পারেনি। এ কারণে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে কলেজ ও হল পরিদর্শন করে কার্যকর রূপরেখা তুলে ধরতে হবে।

আলটিমেটাম দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি, আন্দোলন দমন করতেই হল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের জন্য নয়। তাই আমরা হলে থাকব এবং আন্দোলন চালিয়ে যাব।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে কলেজ প্রশাসন একমত। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে, এই জিনিসটা একবারে হয় না। গত ১৫ বছর ধরে হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করে যে একটা মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে গত ১৫ বছরে একনেকে পাস হয়নি। সেই মেগা প্রকল্পের স্বপ্ন দেখানোর কারণে কোনো বড় সংস্কার ঢাকা মেডিক্যালে হয়নি। যে কারণে কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রদের হোস্টেলের এই দুর্দশা।

অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল আলম বলেন, ফজলে রাব্বি হলের মেইন বিল্ডিংয়ের চারতলার অবস্থা খুবই খারাপ, সেটা পিডব্লিউডি কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ পরিত্যক্ত ভবনে কোনো ছাত্র থাকার কথা নয়। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বর্তমান প্রশাসন গত ৯ মাস ধরে সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের নামাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে আসছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ঢামেকের আগের মেগা প্রকল্প আর হবে না। তবে দুটি হোস্টেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী একনেকে এটা পাস হতে পারে। এ বিষয়গুলো ছাত্রদের জানানো হয়েছে। আমি আশাবাদী তারা বাসায় ফিরে যাবে এবং পরে সুযোগ হলে আমরা একসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।

প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে ঢামেক শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাদের মূল দাবিগুলো হলো- দ্রুত বাজেট পাস করে নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, নতুন ভবন চালু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা, নতুন একাডেমিক ভবনের বাজেট অনুমোদন, পৃথক বাজেট ও বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ এবং প্রকল্পের অগ্রগতি দেখভালে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি।