সরকারি অফিসে ঘুষ দিতে হচ্ছে কৃষককে!
রাজবাড়ী জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কার্যালয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘরের জন্য আবেদন করতে গেলে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে। আবেদন বাতিলের ভয়ে নিরুপায় হয়ে কাগজপত্রের সঙ্গে ২০০-৩০০ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
কৃষকদের অভিযোগ, গত ১৯ জুন আবেদনপত্র জমার শেষ দিন ছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্বহস্তে আবেদন চাওয়া হলেও কৃষকদেরকে আবেদন পত্রের সঙ্গে টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আবেদনপত্র বাতিলের ভয়ে নিরুপায় হয়ে কাগজপত্রের সঙ্গে ২০০-৩০০ টাকা টাকা দিতে হচ্ছে তাদের।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের দেওয়া গণবিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন এবং বিপণন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্প (১ম সংশোধিত) এর আওতায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে কয়েকটি জেলাসহ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী ও বালিয়াকান্দি উপজেলার ১৫ থেকে ২৫ ফুট বিশিষ্ঠ মডেল ঘর বাঁশ, কাঠ, টিন ও আরসিসি পিলার দ্বারা তৈরি ঘর নির্মাণ করা হবে। মডেল ঘর পেতে আগ্রহী পেঁয়াজ ও রসুন চাষীগণকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ দুই কপি ছবি ও জমির পর্চা, স্বহস্তে লিখিত আবেদন জেলা বিপণন কার্যালয়ে ১৯ জুন, ২০২৫ তারিখের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলা ও কালুখালী উপজেলার শতাধিক মডেল ঘরের জন্য আবেদন জমা দেন। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আবেদন জমার সঙ্গে ২০০-৩০০ টাকা করে দিতে হয়েছে তাদের।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে একটি আবেদনের কপি নিয়ে জেলা বিপণন অফিসে গেলে আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার সময় তার কাছ থেকে ২০০ টাকা চান এক কর্মচারী। পরে তিনি ২০০ টাকা আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিয়ে আসেন।
এরপর প্রায় দুই ঘণ্টার মধ্যে ওই কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার সোনাপুর গ্রামের এক কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘরের জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিতে আসেন। আবেদনপত্র জমা দিতে তার কাছ থেকে ৩০০ টাকা দাবি করেন অফিস সহায়ক মো. এনামুল হক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কৃষক বলেন, ‘আমি পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘরের জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিতে এসেছিলাম। আমার কাছে ৩০০ টাকা চেয়েছিল। প্রথমে আমি আবেদন জমা না দিয়ে নিচে এসে আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলে পরে আবেদনপত্র জমা দেই। তারা ফটোকপির কথা বলে এ টাকা নিয়েছে।’
একাধিক কৃষক বলেন, আবেদনপত্র জমা নিতে ২০০-৩০০ টাকা করে নিচ্ছে। আমরা কৃষক। খুব একটা বুঝি না। টাকা চেয়েছে। আমরা দিয়ে দিয়েছি। আমরা অত কিছু জানি না।
ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক কৃষক তার আবেদনপত্রটি অফিস সহায়ক এনামুল হকের কাছে জমা দিয়েছেন। এনামুল হক আবেদনপত্রটি একটি রেজিস্ট্রি খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করছেন। এসময় ওই কৃষক তার পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে এনামুলের হাতে দিচ্ছেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আবেদনপত্র খাতায় লিপিবদ্ধ করা শেষ হলে হাত পেতে কৃষকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক এনামুল হক।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী কৃষি বিপণন কর্মকর্তা নাঈম আহম্মেদ বলেন, ‘এখানে অনেকেই আবেদনপত্র জমা দিতে আসেন। অফিসের লোকজন দিয়ে অনেকেই আবেদনপত্র লেখাচ্ছেন। এর জন্য হয়তো তারা দু-একশো টাকা দিচ্ছে। তারপরও বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যদি কেউ এ ধরণের কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’