সোনারগাঁয়ে ৩ সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ২০ গ্রামের মানুষ

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
২০ জুন ২০২৫, ০৮:৩৫
শেয়ার :
সোনারগাঁয়ে ৩ সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ২০ গ্রামের মানুষ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তিন সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ২০ গ্রামের মানুষ। উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্রামের সন্ত্রাসী নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা, হাবিবুর রহমান হাবু ও ফেলাইনা নামের ৩ জন এলাকায় জমি দখল, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হুমকি ও মারধরে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

গত ১৬ বছর ধরে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এই ৩ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সোনারগাঁও এবং আড়াইহাজার থানায় ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মারামারি ও মাদকসহ দেড় ডজন মামলা রয়েছে। 

এদিকে সম্প্রতি এক বিএনপির নেতার কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন তারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের হুমকিতে অতিষ্ঠ হয়ে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. সেলিম মিঞা বাদি হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরী করেছেন।

জানা যায়, উপজেলার বারদী ইউনিয়নের মান্দারপাড়া গ্রামের অদুদ বেপারীর ছেলে নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা, হাবিবুর রহমান হাবু, শুক্কুর আলীর ছেলে ফেলাইনার কর্মকান্ডে এসব এলাকার মছলন্দপুর, সেকের চর, গোয়ালপাড়া, শান্তিরবাজার, মান্দারপাড়া, পাইকপাড়া, নাকুড়িয়াহাটি, চেঙ্গাকান্দি, বাস্তমাবাগ,বাড়ৈপাড়া, বিশনন্দী, লক্ষীবরদী, জয়নগর, খাসেরকান্দি ও আলগীর চরসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ২০-২৫ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে ওই এলাকায় নিরীহ মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে তারা এসব করেছেন। আর বর্তমানের ওই এলাকার বিএনপির একটি গ্রুপের ছত্রছায়ায় তারা এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসী নূর মোহাম্মদ ওরফে পাগলার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে র্যাবের ক্রসফায়ারে তালিকাভুক্ত হওয়ার কারণে ২০২২ সালে মালয়েশিয়া পালিয়ে যান। বর্তমানে ক্রসফায়ার বন্ধ থাকায় গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নভেম্বর মাসে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পুনরায় তার সন্ত্রাসী গ্রুপকে সক্রিয় করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

এলাকাবাসীর দাবি, ৩ সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। ওই ৩ সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে শাওন মিয়া, মামুন মিয়া, ইউনুস, মাহমুদ, বিজয়সহ কমপক্ষে ৩০ জন তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকেন। তাদের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। তাদের হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম, ইউপি সদস্য ফারুক হোসেন ও তার চাচাতো ভাই শরীফ হোসেন, বালু ব্যবসায়ী জুয়েল মিয়া, বারদী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ।

মসলেন্দপুর গ্রামের আশিকুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের ২০ গ্রামের মানুষ সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা এলাকায় অতিরিক্ত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে চালাচ্ছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে এলাকায় হত্যাকাণ্ডের মত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. সেলিম মিঞা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে ডাকাতি, মাদক, ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণে নুর মোহাম্মদ ওরফে পাগলা আমাকে বিভিন্ন মোবাইল ফোন থেকে হত্যা ও গুম করার হুমকি দিচ্ছেন। তাদের পুরো পরিবার ডাকাতি ও ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি নিয়ে এলাকায় কিছু হলেই মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন।’

অভিযুক্ত নূর মোহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে মানুষ অপ-প্রচার করছেন।’ কেন আপনাদের বিরুদ্ধে এতোগুলো মামলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সৎ উত্তর দিতে পারেননি। 

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান জানান, ওই ৩ জনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।