আইনে শপথ না থাকলে এতদিনে মেয়রের দায়িত্বে বসে পড়তাম: ইশরাক
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী শপথের আগ পর্যন্ত আমি মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পারি না। আইন অনুযায়ী অবশ্যই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করতে হবে। বিশ্বাস করুন যদি আইনে শপথের বিষয়টি না থাকত, তাহলে আমি এতদিনে মেয়রের দায়িত্বে বসে পড়তাম।’
আজ মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নগরভবনে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি নিয়ে রাজপথ ছিলাম এবং আন্দোলনের গণ্ডি নগরভবন পেরিয়ে যমুনা পর্যন্ত গিয়েছিল। দুদিন সেই আন্দোলন চলার পরে দলীয়ভাবে আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত আসল যে বিষয়টি সুরাহা করা হবে পরে আমরা রাজপথ ছেড়ে দেই। জনগণের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সরে এসেছিলাম। সরকার তখন আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে, এখনও হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি দুদককে বলব আপনারা আসুন এবং উপদেষ্টা আসিফের এই কয়েক মাসের কার্যক্রম পর্যালোচনা করুন। আমি বলব আপনারা এই বিষয়টিকে সুরাহা করুন। নগরভবনের এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী উপদেষ্টারা। প্রধান উপদেষ্টাও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারেন না।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ সময় লিখিত বক্তব্যও পাঠ করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পরও তাকে শপথ গ্রহণ করতে না দিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনগণের ম্যান্ডেটের প্রতি অবজ্ঞা করেছেন। তিনি এ ঘটনাকে প্রতারণার শামিল উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ফল বাতিল করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল ১৫/২০২০ নম্বর মামলায় তাকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মেয়র ঘোষণা করে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠায়। তবে সংশোধিত গেজেট পাওয়ার পরও শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন না করে কালক্ষেপণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইশরাক বলেন, শপথ অনুষ্ঠানে বিলম্বের জন্য নির্বাচন কমিশনের আপিল দায়েরের সম্ভাবনা, কিংবা ট্রাইব্যুনালে আর্জি সংশোধনের সুযোগ আছে কি না— এসব অজুহাত দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তিনি বলেন, গতকাল (১৬ জুন) স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, শপথগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শপথ পড়ানো যায়নি। তার এ বক্তব্য সঠিক হলে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই আর শপথ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। এভাবে একজন ব্যক্তি ইন্ধন দিলে এবং গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিলম্ব ঘটালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নিতে নিজের পছন্দের একজনকে প্রশাসক হিসেবে রাখতে চাচ্ছেন। সজীব ভূঁইয়া জনগণের রায়কে অবজ্ঞা করেছেন। তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন, যা প্রতারণার শামিল।'
তিনি বলেন, উপদেষ্টা দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কিন্তু তিনি জানেন না প্রতিটি ওয়ার্ডে কী ধরনের সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওয়ার্ড সচিবরা জন্ম-মৃত্যু সনদ, নাগরিক সনদ, ওয়ারিশি সনদ ইস্যু করেন। টিকাদান কর্মসূচি চালায় ইপিআই বিভাগ। মশক নিধনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে স্প্রে ও ফগার মেশিন রয়েছে। এমনকি কোরবানির বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে।'
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, তিনি বয়সে তরুণ, সামনেই তার দীর্ঘ পথ। তাই তার কাছ থেকে প্রত্যাশা, তিনি জনগণের রায় ও আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন তার কাজ নয়।