‘আকাশেতে লক্ষ তারা’ শ্রোতারা পছন্দ করেছে: মিলা
পপস্টার মিলা। সংগীতজীবনে উপহার দিয়েছেন একাধিক জনপ্রিয় গান। সম্প্রতি ‘ইনসাফ’ সিনেমায় ‘আকাশেতে লক্ষ তারা ২.০’ গানটি গেয়েছেন। এই গান ও বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ
‘আকাশেতে লক্ষ তারা ২.০’ গানের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর শ্রোতাদের মাঝে ফিরে এলেন। কেমন লাগছে?
একটা ভুল ভাঙাতে চাই। আমি কখনও হারিয়ে যাইনি। ২০১৭ সালেও গান প্রকাশ হয়েছে। এরপর করোনা এলো। এমনিতেই অডিও ইন্ডাস্ট্রি চেঞ্জ, নিজের পারসোনাল লাইফে ঝামেলা গেলেও সেটা নিয়ে ভক্তদের মাঝে আগ্রহ ছিল। আমার ক্রাইসিস পিরিয়ডের নিউজগুলোও টক অব দ্য টাউন ছিল। ফিরে আসার কিছু নেই। মিউজিশিয়ানদের আসলে রিটায়ারমেন্ট নেই।
আপনি এর আগে ব্যাক টু ব্যাক হিট গান উপহার দিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে কী বলবেন?
বাচ্চু ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে জেমস ভাইকে কোথাও পান? কয়টা টিভি শোতে লাস্ট দেখছেন? জেমস ভাইয়ের লাস্ট কয়টা নতুন গান বের হইছে? কই ওনাকে তো বলতে পারছেন না যে, উনি হারিয়ে গেছেন। আমি মিউজিক নিয়ে সব সময় ছিলাম। মিউজিক নিয়েই কাজ করছি। যে সময় মনে হয়েছে ব্রেক দরকার, তখন ব্রেক নিয়েছি। মিউজিক তো এমন না যে, ভালো লাগল না, তবু জোর করে গান করে যাব। এটা তো মিস ইউজের জায়গা না। যখন ভালো মিউজিক দিতে পারব, তখনই করব। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখন দরকার নাই, করব না।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
‘আকাশেতে লক্ষ তারা ২.০’ প্রকাশের পর কেমন লাগছে আপনার?
ভয়েস দিয়েছি তিন মাস আগে। আমরা হলাম নাইনটিজ কিডস। যাদের নাম শুনে আমরা বড় হয়েছি, শওকত আলী ইমন তেমনই একজন গুণী মিউজিশিয়ান। উনি ডাকছেন, আমি সম্মানের জন্যই গিয়েছি, গাইলাম। খুবই ভালো লাগল। ঈদের আগেই প্রকাশ হলো ‘ইনসাফ’ সিনেমার এই গান। রিলিজ হওয়ার পর বুঝলাম, শ্রোতারা খুব পছন্দ করছে। ম্যাসিভ হিট। শওকত আলী ইমন ভাই অনেক ট্যালেন্টেড মিউজিশিয়ান। ওনাদের একটা কী জানি ব্যাপার আছে। উনি আমাকে লাকি সিঙ্গার বলেন। এত সুন্দর করে গানটি রিমেক করেছেন। ইমন ভাই না ডাকলে এটা করা হতো না।
জনপ্রিয় অনেক গান উপহার দিয়েছেন। পুরনো গানকে নতুনভাবে প্রকাশ করাটা কীভাবে দেখছেন?
এত কিছু চিন্তা করে যাইনি। ফিল্মের গান করতে যাচ্ছি। শওকত আলী ইমন ভাই ডেকেছেন, চলে গেছি। ওনার গান আগেও করেছি। কখনও খারাপ গাই না। যেহেতু ভালো গাই, কনফিডেন্ট ছিল, শ্রোতারা ভালোভাবেই নেবেন। উনি যেহেতু ডাকছেন, বুঝেশুনেই আমাকে দিয়ে গাওয়াইছেন। এরপর জেনেছি গানটি রিজিয়া পারভীন গেয়েছেন। আপার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওনাকে ফোন করলাম। বললাম, আপা আমি দুঃসাহস করেছি গানটি গাইতে। উনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করেন। বললেন, খুব ভালো গেয়েছো। এটা আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে করেছি। কারণ আমার গান যখন স্টেজে কোনো শিল্পী আমার নাম না নিয়ে পরিবেশন করে থাকেন, তখন খুব মেজাজ খারাপ হয়। রিজিয়া আপাকে বললাম, আপা আপনার মনে কোনো কষ্ট আছে? আপা সুন্দর করে বললেন, তুমি অনেক ভালো গেয়েছো। আমার আরও অনেক ভালো লাগছে যে, গানটি তুমি গেয়েছো।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
সিনেমার গানে কী নিয়মিত পাওয়া যাবে?
ফিল্মে অনেক গান গেয়েছি। ওই সময় ফিল্মের গান ওভাবে প্রমোট হতো না। যেভাবে সলো গান করতাম, ফিল্মে তখন গাইতে চাইতাম না। করলেও অনুরোধে করেছি। শাকিব খানের ‘মাটির ঠিকানা’ সিনেমায় গান করেছি, একসঙ্গে পারফর্ম করেছি। আমাকে চিন্তা করে যদি কেউ গান তৈরি করেন, তাহলে অবশ্যই গাইব।
স্টেজ শো মানেই মিলার ঝড়, দর্শকের উন্মাদনা। স্টেজসহ অন্যান্য ব্যস্ততার কথা জানতে চাই।
সব সময় স্টেজে আমি সরব। কদিন আগেই সৌদি আরবে বড় একটা শো করলাম। দেশকে প্রেজেন্ট করেছি। এটা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। ২৪ জুন কানাডায় যাচ্ছি। চারটি শো করব। চলতি মাসের ২৮, ২৯ এবং ৫ ও ১২ জুলাই শো আছে। এর মধ্যে রক শিল্পীদের নিয়ে বিচারক হিসেবে কাজ করলাম। এ ছাড়া জীবনের সবচেয়ে বড় অ্যাচিভমেন্ট ছিল শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক হিসেবে ওয়ার্কশপ করানো। এখন নিউ জেনারেশনকে পথ দেখাতে পারছি। শিল্পকলা একাডেমি সার্টিফিকেট প্রদান করেছে। আমার জীবনের স্বর্ণালি সময় পার করছি। সম্প্রতি আমার ওয়েবসাইট চালু করেছি ‘মিলা ইসলাম ডট কম’ নামে। এখানে আমার সব গান শুনতে পাবেন। নতুন নতুন ফটোসেশনসহ সব আপডেট থাকবে। আমার কাছে মনে হয়, এখন পর্যন্ত আমার হান্ড্রেড পার্সেন্ট থেকে শ্রোতাদের মাত্র ৩০ পার্সেন্ট দিয়েছি। অনেক কিছু দেওয়া বাকি। মানুষের কিন্তু অনেক লোভ থাকে, হায় হায় আমি অনেক দিন গান গাচ্ছি না, আমার জায়গা অন্য কেউ নিয়ে গেল! আমার জায়গা কেউ নিতে পারবে না, বাংলাদেশে মিলা একজনই। হ্যাঁ অন্য কেউ আসবে, সে তার আলাদা, ইউনিক স্টাইল নিয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
মানুষ ভুল করে, অনুশোচনাও তৈরি হয়। নিজের জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি কী?
জীবনে মনে হয় না কোনো ভুল করেছি। যা হয়েছে, যেভাবে আপনারা দেখেছেন, যেহেতু পাবলিক ফিগার, কিন্তু জীবন নিয়ে কোনো আফসোস নেই। নিজের মর্জিতে ছিলাম, নিজের মর্জিতে গান করেছি, আবার নিজের মর্জিতেই গান ছেড়েছি। এভাবে জীবনকে লিড করেছি। সংগীতে বিশ বছর পার করেছি। ষোলো বছর বয়সে মিডিয়ায় এসেছি। আমার মিডিয়ায় নিজের বলতে, পরিবারের কেউ ছিল না। সবাই অন্য প্রফেশনের। কখনও যদি মনে হয়, আমি গান গাইব না, তাহলে গাইব না। সত্যি কথা বলেছি, আগামীতেও তাই করব। সব জায়গা থেকে হ্যাপি। আমার জীবনকে কখনও কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। চলার পথে অনেক আপ অ্যান্ড ডাউন থাকে। বাসায় রান্না করি। পিতা-মাতা বৃদ্ধ হচ্ছেন, তাদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাকে যারা লালনপালন করছেন, তারা জীবনে যা করেছেন, আমিও যেন তাদের সেটা রিটার্ন দিতে পারি। এটাই তো মানুষের চাওয়া-পাওয়া। চেষ্টা করে যাচ্ছি, সব দিক থেকেই যেন পারফেক্ট হই।