ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

গাজীপুর প্রতিনিধি
১৪ জুন ২০২৫, ২১:২৩
শেয়ার :
ড. ইউনূস-তারেকের বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বৈঠক অনেকের মনে জ্বালা ধরিয়েছে। অনেকেই এটা মেনে নিতে পারছেন না। কেন এই জ্বালা ভাই আপনাদের? আপনাদের উদ্দেশ্যে কি?’

আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরুদ্ধে সব সময়ই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। আমরা কেউই এই চক্রান্তের বাইরে নই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, ছাত্র জনতার আন্দোলন এবং বিএনপির ১৫-১৬ বছরের এক রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন।’

নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘রজমান মাসে কি নির্বাচনী প্রচারণা করা যায়? তবে ফেব্রুয়ারী এবং মার্চের পর রমজান থাকবে, আর থাকবে ঈদের আয়োজন। আপনি এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে কোথায় প্রচারণা চালাবেন? কখন আইনি প্রক্রিয়া হবে। কখন নমিনেশন পেপার জমা দিবে? কখন প্রচার চালাবে? কিভাবে প্রচার চালাবে? সারাদিন রোজা রেখে কি করে এপ্রিল মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া সম্ভব? আমাদের এমন একটি সময় চাই যে সময়ের মধ্যে ধর্মীয় কোনো অনুষ্ঠান, ধর্মীয় কোন উৎসব, রোজা-ঈদ থাকবে না। সে সময়টাই উপযুক্ত সময় হওয়া উচিত। তাহলে যদি লন্ডনের বৈঠকে যদি এটা হয় যে আমরা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বা প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনটা হবে, তো এর মধ্যে কোনো রমজান নাই, কোরবানির ঈদ নাই, বড় কোনো অনুষ্ঠান নেই, পহেলা বৈশাখও নেই। আবহাওয়া ভাল থাকে শুকনো মৌসুম, হালকা শীত থাকে। এই সময়ই বরাবরই আন্দোলন সংগ্রাম হয়, এই সময়ই নির্বাচন হয়। এই দেশের এটা একটি ঐতিহ্য। তাহলে বিষয়টা এই রকমই হয় মধ্য ফেব্রুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখের মধ্যে যদি নির্বাচন কমিশন তারিখ ঘোষণা করে,  তাহলে এর চাইতে উপযুক্ত সময় কি এপ্রিল মাস? এপ্রিল মাস তো হতেই পারে না। আপনার তখন বৈশাখ মাস শুরু হবে, ঝড়-ঝঞ্ঝা কালবৈশাখীর প্রচণ্ড তাণ্ডব চলবে।

রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের কিছু রাজনৈতিক বন্ধু তারা উস্মা প্রকাশ করেছেন, লন্ডনের বৈঠককে তারা বলেছেন নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হবে। ভাই আপনাদের ইতিহাসটা বলুন তো দেখি। আপনারা কখন নিরপেক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। পাকিস্তান আন্দোলনে আপনারা সমর্থন করেননি। আপনারা ৭১ সালে জনগণের বিরোধীতা করেছেন। আপনারা ৮৬ সালে শেখ হাসিনার সাথে নির্বাচন করেছেন। ৯৫ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে হাসিনার সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন। আপনারা এই বার ৫ আগস্টের পর বলেছেন, আওয়ামী লীগকে মাপ করে দিবো, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করবো। তাহলে আপনাদের রাজনীতিটা কিসের রাজনীতি? রাজনীতি মানেই জনগণের কাছে ওয়াদা জনগণের কাছে অঙ্গীকার, যেটি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বারবার বলেছে এই হাসিনা দুর্বৃত্ত, এই হাসিনা গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করেছে, মানুষের কথা বলতে গেলে তার ঠিকানা হয়েছে আয়না ঘরে, তার ঠিকানা হয়েছে পুলিশের অত্যাচার, র‌্যাবের অত্যাচার তার বিরুদ্ধে শত শত মামলা, তার স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে কারাগারে। আপনি সেই আওয়ামী লীগকে মাপ করে দিবেন?’

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা জুলাই আগস্টের রক্তাক্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক শহীদ মুগ্ধ, আরেক দিকে আবু সাঈদ, চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা মহসীন, আহনাফ, সৈকত একের পর এক শিশু-কিশোর-তরুণ এদেরকে হত্যা করে গেছে। আপনাদের রাজনীতিটা ভুলে ভরা। এই ভুলে ভরা রাজনীতি আপনারা শুরু থেকেই করে এসেছেন। আর বিএনপির সময় ইতিবাচক রাজনীতি করেছে। আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, আমরা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে, আমাদের ভূখণ্ড রক্ষার ক্ষেত্রে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে যদি আপোষ করতেন, তাহলে তাকে ৫/৬ বছর জেলে থাকতে হতো না। তার উপর যে নিপীড়ন নির্যাতন এতখানি হতো না যদি তিনি আপোষ করতেন। তিনি জনগণকে ছেড়ে কখনো যাননি, শেখ হাসিনা গেছেন।’

খালেদা জিয়া কখনো মাথানত করেননি জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘এত বড় বড় কথা বলেছেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কত অপপ্রচার, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কত কুৎসা রটিয়েছেন। কত কি কথা বলেছেন, কিন্তু বেগম জিয়া তো দেশ ছেড়ে যাননি। বলেছেন শেখ হাসিনা যা বলছে, যে অপবাদ দিচ্ছে সেটি মিথ্যা। বরণ করেছেন নির্যাতন, কারাগারের মধ্যে থেকেছেন। যে কারাগার ২০০ বছরের পুরনো কারাগার। শুধু ধুলা উড়ে, বালি উড়ে, ওনার চোখের অপারেশন, সেই ধুলাবালি উড়ে, তার চোখকে আরো ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন। তারপরও শেখ হাসিনার অন্যায়ের কাছে তিনি মাথানত করেননি।’

গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) একেএম ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় গবেষণা বিষয়ক শামীমুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন বেপারী, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু তাহের মুসল্লী, এমদাদুল হক মুসল্লী প্রমুখ।