গুইমারাতে বিএনপির সহযোগিতায় পুনর্বাসিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও এখনো খাগড়াছড়ির গুইমারা শাসন করছে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার দোসররা। উপজেলা বিএনপির কমিটিতে যায়গা পেয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর। অভিযোগ উঠেছে, পালিয়ে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বাররা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন বিএনপির সহযোগিতায়। পালিয়ে বেড়ানো এসব আওয়ামী লীগ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ বিএনপির কতিপয় প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে।
গা-ঢাকা দেওয়া নেতাদের মধ্যে এলাকায় ফিরেছেন গুইমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল নারায়ন ত্রিপুড়া, সিনিয়ির সহ-সভাপতি সমিরন পাল, উপদেষ্ঠা শিবু ঘোষ, বড়পিলাক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সানাউল্যাহ। ৩নং সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেদাক মারমাসহ আরও অনেকে।
জানা গেছে, গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গুইমারা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্মল নারায়ন ত্রিপুড়া প্রকাশ্যেই অফিস করেন। ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকেই নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনকে দল গোছাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেদাক মারমা নিয়মিত অফিস করছেন। তিনিও সিন্দুকছড়িতে দল গোছাতে মরিয়া।
জানা গেছে, গুইমারা উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর দিয়ে। আওয়ামী লীগের দোসর হয়েও বিএনপির উপজেলা কমিটিতে সহ-প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন খালেদা বেগম নামের এক নেতা। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ছাত্র-জনতার সরকারের কর্মসূচি। বর্তমান সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। অদৃশ্য কারনে গ্রেপ্তার হচ্ছেনা পলাতক হাসিনার দোসররা।
এদিকে ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের ৬নং বড়পিলাক ওয়ার্ডে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সমন্বয়ে সামাজিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সহসভাপিত বিএনপির বড়পিলাক ওয়ার্ড সভাপতির পদ স্থগিত হওয়া তরব আলী। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে তরব আলীর একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তরব আলী আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচতি হলেও বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতা তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লোকজন দিয়ে সামাজিক কমিটির নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।
জানা যায়, গুইমারা উপজেলা বিএনপি বড়পিলাক ওয়ার্ডে একটি সামাজিক কমিটি করে দিয়েছিল। উপজেলা বিএনপির কমিটিকে পাশ কাটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতাদের নিয়ে কমিটি করায় এলাকায় বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তরব আলী বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। বড়পিলাক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক স্থানীয় মেম্বার সানাউল্যাহকে পুনর্বাসনে বিএনপির একটা অংশের সহযোগীতা রয়েছে।
এসব আওয়ামী লীগ নেতা এলাকায় ফিরে গোপনে দল গোছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অনেকটা প্রকাশ্যে অফিস করছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও অনেকেই রয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবসার বলেন, ‘বিষয়টি অমার জানা নেই।’ তবে এমন কিছু হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া তিনি গুইমারা উপজেলা বিএনপির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
গুইমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘কিছু বিএনপি নেতার আওয়ামী লীগের সঙ্গে আতাত করছে। আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা বিএনপির কমিটিতে খালেদা বেগম নামের একজন আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত স্থান পেয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠনের আগে খালেদা বেগমের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। কমিটি গঠনের পর আওয়ামী লীগের প্রচার প্রচারনায় অংশ নেওয়া কিছু ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে তরব আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে মিলে যারা আওয়ী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’