কোরবানির মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কোরবানির মাংসের ভাগ নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে মো. হুমায়ুন মোল্যা (৫৫) নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এর আগে গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে থানা পুলিশ।
নিহত মো. হুমায়ুন মোল্যা একই গ্রামের মৃত মালেক মোল্যার ছেলে। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্শার চালক ছিলেন। তার চার সন্তান রয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই গোলাম মোস্তফা (৭০), মেয়ে বেনু বেগম (২৫) ও একই গ্রামের চুন্নু শেখের ছেলেআলি কদর (১৯) আহত হয়েছেন। আহত গোলাম মোস্তফা ও আলি কদর বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সরেজমিনে ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থক লিয়াকত মাস্টারের সঙ্গে ময়না ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পল্লি উন্নয়ন বোর্ড সমিতির চেয়ারম্যান নবীর হোসেন চুন্নু ও জামাল হোসেনের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিলো। নিহত হুমায়ুন তার ভাই ভাতিজা সম্প্রতি লিয়াকত মাস্টারের দল ত্যাগ করে প্রতিপক্ষ নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেয়। এতে লিয়াকত গ্রুপের লোকজন তার ওপর ক্ষুব্ধ। বিষয়টি এতদিন প্রকাশ না করলেও ঈদের দিন নবীর হোসেন চুন্নুর দলের কোরবানির মাংসের সামাজিক ভাগ নেন হুমায়ুন মোল্যা। এ নিয়ে লিয়াকত মাস্টার তার ভাই জাহিদ ও একই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে ঈদের পরের দিন সকালে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে নবীর হোসেন চুন্নুর সমর্থকগণ।
এ সময় দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুমায়ুনের উপর আক্রমণ চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে মারাত্মক আহত হয় হুমায়ুন মোল্যাসহ ৪ জন গুরতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন মোল্যাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। তবে এ ঘটনার পর এটিকে আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন একটি পক্ষ।
ময়না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির মোহাম্মদ সেলিম জানান, এটি গ্রাম্য দলাদলির কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনেকে একে রাজনৈতিক কোন্দলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা সত্য নয়।
নিহতের ভাতিজা ছোলনা সালামিয়া মাদ্রাসাশিক্ষক মো. ফসিয়ার রহমান মোল্যা বলেন, ‘লিয়াকত মাস্টারের দল ছেড়ে নবীর হোসেন চুন্নুর দলে যোগ দেওয়ায় মাস্টারের লোকজন আমাদের উপর আক্রমণ করতে চেয়েছিলো। ঘটনার দিন আমার দুই চাচাকে একা পেয়ে তারা আক্রমণ করে। এটা গ্রাম্য কোন্দল। দুই গ্রুপেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক রয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে লিয়াকত মাস্টারের সঙ্গে যোগযোগের চেষ্টা করলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সংঘর্ষে আহত হুমায়ুন নামে একজন আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ খবরে ওই গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’