ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শিকার যে পণ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৯ জুন ২০২৫, ১৪:০৭
শেয়ার :
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের শিকার যে পণ্য

পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে গত মাসেই তুমুল সংঘাতে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান। হত্যাকাণ্ডের পরই নয়াদিল্লি তৃতীয় দেশ দিয়ে আসা সমস্ত পাকিস্তানি পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। এর ফলে স্থবির হয়ে পড়ে দুই দেশের মধ্যকার গোলাপি লবণের ব্যবসা। 

হিমালয়ের গোলাপি লবণে লোহাসহ খনিজ পদার্থের চিহ্ন থাকার কারণে গোলাপি একটি আভা আছে এবং এটি রান্না, সাজসজ্জার বাতি এবং স্পা’র ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুরাও তাদের ধর্মীয় উপবাসের সময় এই লবণ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কারণ এটি সমুদ্রজাত লবণ নয়।

গোলাপি লবণ পাওয়া যায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খেওড়া লবণ খনিতে। কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত সিফটো লবণ খনির পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লবণ খনি এটি। খেওড়া লাহোর শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার (১৫৫ মাইল) দূরে অবস্থিত। খনিতে প্রায় ৮২ মিলিয়ন মেট্রিক টন লবণ মজুত আছে এবং প্রতি বছর ০.৩৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন লবণ উত্তোলন করা হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ লবণ শিল্প উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় এবং বাকিটা ভোজ্য ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়।

আমদানি-রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে আল-জাজিরা। বিপন কুমার নামের একজন তিন দশক ধরে ভারতের বিক্রির জন্য পাকিস্তান থেকে হিমালয়ান গোলাপি লবণ আমদানি করেন। এই নিষেধাজ্ঞা তার ব্যবসাকে মারাত্মকভাবে স্থবির করে দিয়েছে।

বিপন জানান, তিনি সাধারণত প্রতি চার মাসে ২০০০ থেকে ২,৫০০ টন গোলাপি লবণ বিক্রি করেন। বলেন, ‘লাভের পরিমাণ খুবই কম, তবুও বেশি বিক্রির কারণে ব্যবসাটি সম্ভব। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে গোলাপি লবণের ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা জানি না পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে।’

খনিটির কাছাকাছি বসবাসকারী সাংবাদিক ফাহাদ আলী আল জাজিরাকে বলেন, ‘খনিটি খুবই মনোরম এবং প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক এখানে আসেন। এখানে প্রায় ৩০টি লবণ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট রয়েছে, যেখানে বিশাল শিলা লবণ পাথর হাতে খনন করে ট্রাকে বোঝাই করা হয় এবং পাঠানোর আগে প্রস্তুত হয়।’

লবণ কাঁচা আকারে ভারতে রপ্তানি করা হয়। পরে ভারতের আমদানিকারকরা প্রক্রিয়াজাত করে, পিষে এবং বিক্রির জন্য প্যাকেট করে। এই গোলাপি লবণের জন্য ভারত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর সবই বন্ধ হয়ে যায়। সংঘাত থামলেও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। ফলে ভারতে বেড়ে গেছে এই লবণের দাম। 

অমৃতসর-ভিত্তিক ব্যবসায়ী গুরভীন সিং বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর এক মাসেরও বেশি সময় হয়নি, এবং দাম ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞার আগে খুচরা বাজারে যে লবণ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হত, তা এখন কমপক্ষে ৬০ টাকা প্রতি কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে।’

কিছু জায়গায় দাম আরও বেশি। এই সপ্তাহে কলকাতার বাজারে গোলাপি লবণ ৭০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।