টাঙ্গাইলে আশানুরূপ ক্রেতা নেই কামারের দোকানগুলোতে
আর মাত্র দুইদিন পরেই মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কোরবানীর পশু ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন হাটে হাটে যাওয়া শুরু করেছেন। অন্যদিকে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানোর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বানাতে ও কিনতে ছুটছেন কামারের দোকানগুলোতে। তবে কামাররা জানান, এখনো আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মিলছে না দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল পার্ক বাজারের কামারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, দা, বটি, চাপাতি, ছুরি, দেশি কুড়াল, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কামাররা। ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি থাকলেও জমে ওঠেনি আগের মতো কামারিদের দোকানগুলো।
কামার শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২'শ থেকে ৩'শ টাকা, দা ৬'শ থেকে ৯'শ টাকা, বটি ৯'শ থেকে হাজারেরও উপরে, পশু জবাই ছুরি ৮'শ থেকে দেড় হাজার টাকা, চাইনিজ কুড়াল ৮'শ, দেশিও কুড়াল ৬'শ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তাদের সবারই পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এ পেশা। তাই তারা ঐতিহ্য হিসাবে ধরে রাখছেন এ পেশাকে।
কামার সত্যরঞ্জন দাস ও উদয় সরকারের সঙ্গে কথা হয়। তারা ৪০ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। তারা বলেন, ‘আগের মত আর তেমন কাজ নেই। এখন আমাদের এ পেশায় নুন আনতে পানতা ফুরানোর মত অবস্থা। সারাবছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠা যায়। বাপ-দাদার পেশা, এ পেশাই জীবন বাঁচাই, ছাড়তেও পারিনা। তারপরেও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হয়। এর সঙ্গে কাজ করা লোকও এখন আর পাওয়া যায় না। পরিশ্রম বেশি, তাই এ পেশা থেকে লোক সরে যাচ্ছে । আগে কয়লা ও লোহার দাম কম ছিল তাই খাটা খাটনি করে ভাল দাম পাওয়া যেত। এখন তেমনটা হয় না।’
তারা আরও বলেন, ‘বাপ দাদার পৈত্তিক এই পেশায় জীবন বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি সরকার। তাই পেটের দায়ে পৈত্রিক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুকছেন।’
টাঙ্গাইল পার্ক বাজারে কথা হয় জেলা সদর থেকে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, ‘গরু কোরবানীর জন্য দা, ছুরি ও চাপাতির অর্ডার দিয়েছি। ঈদ আসলে দাম একটু বাড়ে। তবুও আমাদের বানাতে হয়। কোরবানীর পশু কেনার যে সময় লাগে, এখন তার চেয়ে বেশি সময় লাগে সরঞ্জামাদি বানাতে।’
তিনি বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার দাম একটু কম বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া এবার কামারের দোকানগুলোতে ভীড়ও কম পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত করা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০টি পশু। তবে জেলায় কত পরিবার কামার পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন, সেই তথ্য জানাতে পারেননি সরকারের সংশ্লিষ্ট পরিসংখ্যান দপ্তর।