জাল সনদে নিজেই নিজের নিয়োগে প্রভাষক সাবেক এমপিপত্নী
জাল সনদপত্র ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ নেন পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল (সাইদুর রহমান)-এর স্ত্রী লায়লা পারভীন।
জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাবেক বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারী মহিলা বর্তমান নাজিরপুর সরকারী মহিলা কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে দুদক ওই কলেজের নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ তদন্তের পর ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ৩ জনের নামে পিরোজপুর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সম্রাট বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং একই কলেজের প্রিন্সিপাল ও গভর্ণিং বডির সদস্য সচিব ঠাকুর চাঁদ মজুমদার।
মঙ্গলবার রাতে পাঠানো দুদকের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও মামলার বিবরনে জানা যায়, নাজিরপুর সরকারী মহিলা কলেজটি ২০১০ সালে মাধ্যমিক কলেজ হিসেবে চালু হয় এবং ২০১৩ সালে বি.এ. কোর্স চালু করা হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠাকাল হতে এমপিওভুক্ত না হলেও ২০১৮ সালে সরাসরি সরকারীকরন করা হয়। ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট গভর্ণিং বডির সভায় ইসলাম শিক্ষাসহ কয়েকটি বিষয়ে প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই হিসেবে ৩০/০৮/১৩ তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক লায়লা পারভীন স্বামী এ কে এম এ আউয়াল ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক পদে সভাপতি বরাবরে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ২নং ও ৩নং আসামী সহ মোট ৫ সদস্যের উপস্থিতিতে গত ০৫/১০/২০১৩ তারিখে ইসলাম শিক্ষা প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য ডিজির প্রতিনিধিসহ একটি নিয়োগবোর্ড গঠন করা হয়। গঠিত নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশের প্রেক্ষিতে আসামি আউয়াল (সভাপতি গভর্ণিং বডি) আসামি দাতা সদস্য (গভর্ণিং বডি) লায়লা পারভীনসহ গভর্ণিং বডির সদস্যরা ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক নিয়োগের অনুমোদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ২২/১২/২০১৩ তারিখে আসামি লায়লা পারভীনের নামে নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়। নিজেই গভর্ণিং বডির দাতা সদস্য হিসেবে অনুমোদন দিয়ে লায়লা পারভীন ২৩/১২/২০১৩ তারিখে ওই কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।
আসামি লায়লা পারভীনের স্বামী গভর্ণিং বডির সভাপতি হওয়ায় লায়লা পারভীনের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও জাল ও নকল সনদপত্র ব্যবহার করে প্রভাষক নিয়োগ লাভের অভিযোগের ব্যাপারে লায়লা পারভীনের এস এস সি সনদ, যার ক্রমিক নং-১৫৩২৭, রেজিঃ নং-৫৭৩২১/১৯৭৭,রোল-রাজৈর নং-৭৭৮৭৩, এইচ এস সি সনদ ক্রমিক নং-৪৪৯০৪, রেজিঃ নং-৭৬৫৮/১৯৭৯, রোল নং-মাদারী-৪৪০৫০ উভয়ই ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে খোঁজ নিতে গেলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে ০৪/০৭/২০২৪ তারিখে চিঠি দিয়ে জানানো হয় তাদের রেকর্ডে এই নামে বা নাম্বারে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইভাবে ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর সরকারী নাজিমুদ্দিন কলেজ থেকে স্নাতক পাশের সনদপত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও এই নামে ও নাম্বারে কোনো সনদপত্র ইস্যু করা হয়নি।
মামলার অভিযোগে আসামি লায়লা পারভীন পিতা আ. কুদ্দুস আখন্দে বিরুদ্ধে এস এস সি, এইচ এস সি ও স্নাতক সনদপত্র নকল ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রভাষক হিসেবে বেতন ভাতা বাবদ সোনালী ব্যাংক নাজিরপুর শাখা হতে মোট ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪০৬ টাকা উত্তোলন পুর্বক আত্মসাত করেছেন।
লায়লা পারভীনের এই অবৈধ কাজের সবকিছু জানা সত্বেও গভর্ণিং বডির সভাপতি হিসেবে এ কে এম এ আউয়াল নিজ স্ত্রীকে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া এবং এই কাজে সহযোগিতা করার জন্য কলেজ অধ্যক্ষ ও গভর্ণিং বডির সদস্য সচিব ঠাকুর চাঁদ মজুমদারে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে প্রেস নোটে উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকালে আরও কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও আসামি করা হবে।