রাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তদন্ত চায় জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৩ জুন ২০২৫, ০৮:৫৮
শেয়ার :
রাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তদন্ত চায় জাতিসংঘ

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফায় হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। 

রেড ক্রস জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৭৯ জন হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। তবে হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ৩১।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বা ভেতরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। জিএইচএফ জানিয়েছে যে, প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং তাদের স্থাপনায় বা তার কাছাকাছি কোনো হামলার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, ‘গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। আমি এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি এবং দোষীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

মহাসচিবের করা মন্তব্যকে অপমানজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিকমাধ্যমে এক্সে করা এক পোস্টে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে হামাসের কথা উল্লেখ না করার জন্য তার সমালোচনাও করেছে দেশটি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলছে, রাফায় রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে সেই সময়ে ১৭৯ জন ব্যাপক হতাহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এবং ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। সব রোগী জানিয়েছেন যে তারা সাহায্য বিতরণ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।

মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তাদের দলগুলোও গুরুতর আহত ব্যক্তিদেরও চিকিৎসা করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

তারা আরও জানিয়েছেন, রোগীদের ইসরায়েলি ড্রোন, হেলিকপ্টার, ট্যাংক এবং সেনারা চারদিক থেকে গুলি চালিয়েছে। এসময় তাদের এক কর্মীর ভাই বিতরণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করার সময় নিহত হয়েছেন।

রাফার এক সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, জিএইচএফের সাইটের কাছে রাফার আল-আলম গোলচত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে গুলি চালায়। 

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে, প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে তাদের সেনারা গুলি চালায়নি। মানবিক সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি বা ভেতরে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। 

মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন হামাসের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর এবং গাজার জনগণকে সেই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য স্পষ্ট ও সহিংস চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় গত একদিনে কমপক্ষে আরও ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছে গেছে।

এছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

বার্তাসংস্থাটি বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৫৪ হাজার ৪৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।