আগে অ্যালবাম করতে হলে কোম্পানির দ্বারে ঘুরতে হতো, এখন সেই কষ্ট নেই

তারেক আনন্দ
০২ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আগে অ্যালবাম করতে হলে কোম্পানির দ্বারে ঘুরতে হতো, এখন সেই কষ্ট নেই

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কাজী শুভ। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সংগীতজীবনে উপহার দিয়ে আসছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ‘সোনা বউ’, ‘মন পাঁজরে’, ‘যাহার লাগি’, ‘রসিক আমার’, ‘এত কাছে’ প্রভৃতি গান শ্রোতাদের মনে গেথে আছে। সংগীতের নানা বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারেক আনন্দ

দীর্ঘ সংগীতজীবনে প্রথমে পেলেন সিডির যুগ। এরপর ইউটিউব, এখন গান অনেক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ হচ্ছে। এই পরিবর্তনটাকে কীভাবে দেখছেন?

আমার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ হয় ২০০৯ সালে ‘সাদামাটা’। এই অ্যালবামটি তুমুল হিট হয়। ‘সোনাবউ’, ‘তুমি বিনে আকুল পরান’, ‘অঝোর শ্রাবণ, ‘নীলিমা’ প্রভৃতি গান ছড়িয়ে পড়ে চারদিক। এরপর প্রকাশ করলাম একে একে ‘সাদামাটা-২’, ‘সাদামাটা-৩’, আমার সুরে মিশ্র অ্যালবাম ‘এত কাছে’, পাঁচ গানের আরেকটি অ্যালবাম ছিল ‘দাগা’। এই অ্যালবামের গানগুলোর মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সিডির সময় তুমুল ব্যস্ত গায়ক ছিলাম। দম ফেলার সময় ছিল না। ইউটিউবের শুরুর দিকেও আমার অসংখ্য গান প্রকাশ হয়েছে। এমনও ছিল এক ঈদে আমার ৩৮টি গান প্রকাশ হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম চলে এসেছে। অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও গান থেকে দূরে চলে গেছে। এখন শিল্পীরাই নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এই পরিবর্তনকে আমি স্বাগত জানাই।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে যেখানে নতুন আয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, ঠিক এই সময় অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো গান থেকে দূরে চলে গেল, এটা কেন? আপনার অভিজ্ঞতায় কী বলে?

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিল্পীদের একটা সময় ব্যাপক সাপোর্ট দিয়েছে। শিল্পীরাও সবসময় আন্তরিক ছিল। এটা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। ডিজিটাল সময়ে এসে তারা ওয়াচ টাইমের কথা চিন্তা করে নাটকের দিকে চলে গেছেন বেশি মুনাফার আশায়। মূলত তারা নগদ উপার্জনে বিশ্বাসী। তবে গানের রেভিনিউ ধীরে ধীরে হলেও সারাজীবন আসতেই থাকে। আমাদের অনেক পরনো গান, নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন টিকটক, রিলসে প্রচুর ক্রিয়েশন হতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গান থেকে প্রতি মাসেই রেভিনিউ পাচ্ছে।

এতটা বছর গান করার পর এখনও যেহেতু সেই রেভিনিউ মাসে মাসে তুলছে, তাহলে কী গান প্রকাশে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই?

ওনারা যেহেতু ব্যবসায়ী। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যবসার কথাই চিন্তা করবে, হয়তো তাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমি বলব, যে সমস্ত শিল্পী অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবদান রেখেছেন তাদের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করা। পাশাপাশি নতুনদের নিয়েও কাজ করা উচিত। দায়বদ্ধতার কথা যদি আসে তাহলে তাদের ভাবা উচিত, অডিওর টাকাটাই কিন্তু নাটকের জন্য ঢালছেন।

বর্তমান ব্যস্ততার কথা জানতে চাই। ঈদে আপনার কোনো নতুন গান প্রকাশ হবে?

ঈদ উপলক্ষে প্রকাশ হবে আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘কাজী শুভ অফিসিয়াল’ থেকে ‘ভালো মানুষ ভালোবাসা পায় না’। অন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশ হবে ‘মায়া মায়া লাগে’, আমার এবং কোনালের দ্বৈত গান ‘ছাইড়া যাবো না’ প্রকাশ হচ্ছে আই কে মিউজিক স্টেশন থেকে। আরও বেশকিছু গানের সুর, সংগীত করা হয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হবে।

অনেক শিল্পী নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল থেকে গান প্রকাশ করছেন। নিজ উদ্যোগে গান করে টিকে থাকাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

একজন শিল্পীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলই একটা প্রডাকশন হাউস। একজন শিল্পী চাইলে তার মতো করে স্বাধীনভাবেই নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকেই গান প্রকাশ করতে পারছেন। আগে কিন্তু বিষয়টা এত সহজ ছিল না। একটা অ্যালবাম করতে গেলে কোম্পানির দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। এখন কিন্তু সেই কষ্ট নেই। একটু বুঝে-শুনে কাজ করলে আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো কিছু করা সম্ভব। সত্যিকার অর্থে মেধাবী শিল্পীরা নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের সৃষ্টিকর্মগুলো শ্রোতাদের সামনে নিয়ে আসতে পারেন।