অবশেষে যশোর হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার হলো সেই নারীর

যশোর প্রতিনিধি
০২ জুন ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
অবশেষে যশোর হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার হলো সেই নারীর

অবশেষে যশোর জেনারেল হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে এইডসে আক্রান্ত সেই নারীর। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে অস্ত্রোপচার। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও নবজাতক উভয়ে সুস্থ আছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শেষে গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটার ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, মাস তিনেক আগে এক নারীর দেহে এইডস সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। নিয়মানুয়ায়ী, গত ২৮ মে তার সিজারিয়ান অপারেশন দরকার ছিল। গাইনি বিভাগ তার অপারেশনের সক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে। কিন্তু এইডস আক্রান্ত রোগীর অপারেশন করা হলে পরবর্তী তিন দিন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এ নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় তা করা সম্ভব হয়নি।

একাধিক চিকিৎসক জানান, এ হাসপাতালে প্রতিদিন সিজারিয়ানসহ কমবেশি অর্ধশত অপারেশন হয়ে থাকে। ওই নারীর অপারেশন করা হলে হাসপাতালে তিন দিন অপারেশন বন্ধ রাখতে হবে। তা হলে ওই সব রোগী যাবে কোথায়? ঢাকায় তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে উল্লেখ করে চিকিৎসকসহ হাসপাতালের একাংশ তাকে রেফার করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

মতপার্থক্যের কারণে তার অস্ত্রোপচার অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অবশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে গতকাল রবিবার সকালে এ হাসপাতালেই তার অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

হাসপাতালের প্রশাসনিক ও গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াসমিন আক্তার ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট জাফর ইকবালের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম এই অস্ত্রোপচারে অংশ নেয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মা ও নবজাতক বর্তমানে সুস্থ আছেন। গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ইয়াসমিন আক্তার জানান, প্রসূতির অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ইনস্ট্রুমেন্ট, মাফ, গজ, ব্যান্ডেজসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আগুনে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। প্রসূতি অপারেশন থিয়েটার আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য জীবাণুমুক্ত মেডিসিন দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, এইডস আক্রান্ত হওয়ায় রোগী ও পরিবারের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

আক্রান্ত নারীর পরিবারে অন্য কেউ এইডস আক্রান্ত আছেন কিনা- এ বিষয়ে এনজিওকর্মীরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নবাগত শিশুর শরীরে এইডসের আলামত পাওয়া না গেলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

প্রসঙ্গত, গতকাল রবিবার দৈনিক আমাদের সময়ের শেষের পাতায় ‘যশোর জেনারেল হাসপাতালে মতবিরোধ, এইডস আক্রান্ত হওয়ায় আটকে আছে সিজার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।