নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ, প্রতিবাদ এনসিপির

অনলাইন ডেস্ক
৩১ মে ২০২৫, ২১:২৫
শেয়ার :
নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ, প্রতিবাদ এনসিপির

দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ‘জড়িয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ’ প্রকাশের অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ শনিবার দেওয়া বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় দলটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি- গতকাল দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক কালবেলা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, এনটিভিসহ আরও কয়েকটি গণমাধ্যম সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি এই ধরনের ক্লিকবেইট ও শিকারি সাংবাদিকতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।

এতে বলা হয়, ‘দৈনিক মানবজমিনের উক্ত প্রতিবেদনে (৮ পৃষ্ঠা, কলাম ১) আতিক মোর্শেদকে মো. নাহিদ ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সঠিক নয়।  মো. নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে আতিক মোর্শেদ তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন, কিন্তু তিনি বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়্যেব আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন। এ ছাড়া, গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনসিপি আহ্বায়ক পরিষ্কার করেছেন যে, উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত থাকাবস্থায় ‘‘নগদ’’ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ছিল। ফলে নগদ সংক্রান্ত ব্যাপারে তাকে জড়িয়ে এমন প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আরও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি– একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ‘‘রেডিমেইড’’ প্রতিবেদনকে তথাকথিত ‘‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’’ হিসাবে জনগণের সামনে উপস্থাপনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে উঠেছে। এর আগে ‘‘ওয়ান-ইলেভেন সরকারের’’ আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে এ ধরনের ফরমায়েসি সংবাদ প্রকাশের নজির আমরা দেখেছি। বর্তমান সময়ে ঠিক একই ধরনের কার্যক্রম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার প্রতিধ্বনি করছে এবং আরেকটি এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। ’

এনসিপি বলছে, ‘এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কোনো রূপ যাচাই-বাছাই ব্যতীত একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মিডিয়া সেল থেকেও অব্যাহতভাবে এনসিপি এবং মো. নাহিদ ইসলামকে টার্গেট করে ‘‘ফটোকার্ড’’ প্রকাশ করতে দেখেছি আমরা। যা গভীর উদ্বেগের ও শঙ্কাজনক। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চাই, যেখানে পারস্পরিক সমালোচনা হবে গঠনমূলক, যুক্তিনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ। ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতা পারস্পরিক সম্মান ও আস্থা নষ্ট করে রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিবেশ আবারও পূর্বের ন্যায় দ্বন্দ্বমুখর ও আক্রোশমূলক করে তুলতে পারে; যা সকল পক্ষেরই পরিহার করা উচিত বলে আমরা মনে করি। ’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে দৈনিক মানবজমিন অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংশোধনী আনলেও, গতকালই দৈনিক কালবেলা, দৈনিক কালের কণ্ঠ ও এনটিভি একটি রাজনৈতিক দলের নেতার ফেসবুক পোস্টকে উপজীব্য করে এনসিপির আহ্বায়ককে জড়িয়ে চটকদার ও বিভ্রান্তিকর শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ’

এতে বলা হয়, ‘এনসিপি উল্লেখিত গণমাধ্যমসমূহের কাছে অবিলম্বে বিভ্রান্তিকর তথ্যের সংশোধন এবং ভুল স্বীকার করে পেশাদার সাংবাদিকতার ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাচ্ছে। ’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একটি গণঅভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা আমরা দেখছি না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের ন্যায় গণমাধ্যমেও পতিত ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহকদের দেখা যাচ্ছে। খোদ অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনা কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যাকেই নানা মহল বিতর্কিত এবং প্রশ্নসাপেক্ষ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ ছাড়া, গণমাধ্যমে পুরোনো কায়দায় রাজনৈতিক দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর থেকেই কিছু রাজনৈতিক পক্ষকে গণমাধ্যমের মালিকানা ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে তৎপর হতে দেখা গেছে। যাতে বিভিন্ন অলিগার্ক মাফিয়া মিডিয়া মালিকদের সংশ্লিষ্টতাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ও নিরপেক্ষতাকে সংকুচিত করে। ’

এনসিপি বলছে, ‘আমরা হতাশার সাথে লক্ষ করছি- গণমাধ্যমের মালিকানা ও পদের হাতবদল হয়েছে শুধু; গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই দুরবস্থা নিরসনে অনতিবিলম্বে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি। পাশাপাশি, গণমাধ্যমের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণের মাধ্যমে যারা এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করছেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানে প্রতিফলিত গণসার্বভৌমত্বের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদেরকে মোকাবিলা করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি আমরা।’