বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে মারধরের ঘটনায় আটক ৬
ইভটিজিংয়ের ঘটনায় থানায় অভিযোগ জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে বের হওয়ার পরে হামলা হয়েছে ফরিদপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম-সদস্য সচিব বৈশাখী ইসলাম বর্ষা ও তার বাবা বাবু শেখের ওপরে। পরে সন্ধ্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে গেলে অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশসহ ভুক্তভোগীদের ওপরে ফের হামলা চালায়। এতে পুলিশসহ অনেকে আহত হয়েছেন।
ফরিদপুরের নগরকান্দায় রাস্তায় ফেলে বৈশাখী ইসলাম বর্ষা (১৮) নামের এক কলেজছাত্রীকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরের ঘটনায় একটি ফেসবুক লাইভ ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। তিনি ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ও ফরিদপুর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম-সদস্য সচিব।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে উপজেলার ভাবুকদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি ওই এলাকার বাবু শেখের মেয়ে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সূত্রপাত:
নগরকান্দার ফুলসূতী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণি পড়ুয়া বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষার ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ জানায় বর্ষার পরিবার। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয়দের নিয়ে উভয় পক্ষের সালিশ বৈঠক বসার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও অপরপক্ষ না আসায় ওই সালিশ হয়নি। এ অবস্থায় বর্ষা ও তার বাবা বাবু শেখ নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানাতে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৈশাখী ইসলাম বর্ষার ওপর হামলার খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। একই সময় ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার প্রাক্কালে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। স্থানীয়রা পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটক ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে আসে। বৈশাখীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক অন্তত কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে সেনাবাহিনী এসে হামলাকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে সড়ক ছেড়ে দেন তারা।
বর্ষার পরিবারের অভিযোগ, তার ছোট বোনকে বিএনপির এক কর্মী সাগর হোসেন পছন্দ করে। তাকে বিরক্ত ও ইভটিজিং করায় নগরকান্দা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসার সময় পথে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে চুল ধরে টানে ও মারধর করে। তার বাবাকেও খোঁজে মারধর করার জন্য। সেখানে বর্ষা ফেসবুক লাইভে এসে তার হামলার কথা জানায় এবং পরবর্তীতে সেখান থেকে প্রশাসন তাদের উদ্ধার করে।
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা জানান, ওই সমন্বয়ক এবং যে ছেলের সঙ্গে এ ঘটনা তারা দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরনার পরিবারের সদস্য। ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘এটি ভাবুকদিয়া গ্রামে দুই পরিবারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। এর সঙ্গে বিএনপি কিংবা রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বরত) আসিফ ইকবাল বলেন, ‘একটি মেয়েকে উত্ত্যক্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া উত্ত্যক্তকারী যুবক শরীফ বেপারীসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আরও অভিযান চলছে।’