নগদের অর্থ সরানোর অভিযোগ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

অনলাইন ডেস্ক
৩০ মে ২০২৫, ২০:০৪
শেয়ার :
নগদের অর্থ সরানোর অভিযোগ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে কথা বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।  তার দাবি, নগদ থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা বাবদ। আজ শুক্রবার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া দুটি পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন।

আজ বিকেলে দেওয়া প্রথম পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, ‘ব্যাপক অস্থিরতার পরে ২৭ মে নগদ কর্তৃপক্ষ মূল লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ডাকবিভাগকে পরিচালনা দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। ’

তিনি লেখেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসকের ওপর স্থগিতাদেশ আসলে নগদে অস্থিরতা শুরু হয়। এটাকে ব্যবহার করে শাফায়াত গং-এর হায়ারিং, ফায়ারিং শুরু হয়। তখন ডাক বিভাগ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন শাফায়াতের সম্ভাব্য সহযোগী হিসেবে মুইজ নামের লোককে (মানবজমিনের রিপোর্টে এসেছে) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তার মাধ্যমে তারা নগদের অপকর্ম সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করে। ডাক বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যৌথভাবে নিজেকে নগদের সিইও দাবি করা শাফায়েতকে (বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলার আসামি) গ্রেপ্তার করতে উদ্যোগ নেয়। পরে জানা যায় তার একাধিক পাসপোর্ট আছে। নগদে দেখানো তার পাসপোর্ট ৮ জানুয়ারি থেকে দেশের বাইরে এবং মালয়েশিয়ায় দেখাচ্ছে। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে সে ক্যান্টনমেন্টে অবস্থান করছিল। সিআইডির অভিযানের প্রস্তুতির সময় সে পালিয়ে যায়। ’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেখেন, ‘উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত প্রশাসকের ওপর স্টে অর্ডার আসলে তানভির মিশুক নিজেকে সিইও দাবি করে মেইল দেয় এবং একই মেইলে বর্তমান পরস্থিতিতে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানায়। পরে শাফায়াত নিজেকে সিইও দাবি করে, মুইজকে হেড অফ এইচআর নিয়োগ দেয় এবং বিভিন্ন কর্মকর্তা বরখাস্ত ও বদলি শুরু করে প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করে তোলে। শুরু হয় প্যানিক। এমতাবস্থায় ডাক বিভাগ নিজের লাইসেন্সিংয়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়।’

তিনি লেখেন, ‘মুইজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পরে অনুরোধ করা হয়েছে যেন মুইজকে ছেড়ে দেওয়ার আগে মুচলেকা নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নাই। সে নগদের সাবেক লোকেদের কোনো হেল্প করবে না এই মর্মে মুচলেকা দেয়। সিআইডি তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। নতুন কোনো অনিয়ম প্রমাণ হলে তাকে গ্রেপ্তার করার অনুরোধ করা হয়। ’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, ‘শাফায়েত পালানোর পর, শ্যামল দাস এক্টিং সিইও হয়। আরেকদফা অস্থিরতা শুরু হয়। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে ডাক বিভাগে নগদের স্বঘোষিত সিইও, ডেপুটি সিইওকে ডেকে এনে গত দশকের সকল অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ১৪ জন কর্মকর্তা বরখাস্ত করা, ৫ জনকে বদলি করা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অনিয়ম (ভুয়া এজেন্ট, ভুয়া ই-কেওয়াসি, ভুয়া অ্যাকাউন্ট, জুয়ার সংশ্লিষ্টতা) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে তাদের ভারপ্রাপ্ত সিইও শ্যামল দাস/ডেপুটি সিইও মুইজ পদ ডাক বিভাগের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে সম্মত হয়।’

তিনি লেখেন, ‘এর আগে নগদ থেকে মার্চ মাসে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য একটি চিঠি লিখেছিল। এটিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে ডাক বিভাগ দায়িত্ব বুঝে নেয়। ডাক বিভাগ নতুন ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে জনাব তালেবকে সাময়িক দায়িত্ব দেয়।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেখেন, ‘নতুন সিইও গত ৩ মাসের সমস্ত খরচের হিসাব পত্র তৈরি করবে, অনিয়মের ওপর বিশদ রিপোর্ট করবে, সেটা মিডিয়ায় প্রকাশ করবে বলে- এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত সিইওকে প্রতিষ্ঠানে শৃংখলা আনতে, ফায়ার ও বদলি করা কর্মকর্তাদের স্বপদে ফেরাতে এবং ঈদের আগে বেতন ও বোনাস দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৪ বছর ধরে বন্ধ থাকা ফিচার আপগ্রেড, সফটওয়ার আপগ্রেডের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

তিনি লেখেন, ‘মূল লাইসেন্সধারী হিসেবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তার দায়িত্ব পালন করেছে বলে আমি মনে করি এবং নগদ পরিচালনায় বাংলাদেশ বাংকের বিশেষজ্ঞ দেশের সাথে নিয়ে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং চলমান ফরেন্সিক তদন্তে সহযোগীতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগদের সকল অনিয়ম তদন্তে আইনশৃংখলা বাহিনী কাজ করছে এবং সিআইডিকেও বিষয়াদি সার্বিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, ‘২৯ মে ডাক বিভাগ নিযুক্ত নতুন সিইও বলেছেন তিনি মিশুক ও শাফায়তসহ বাংলাদেশ ব্যাংককের দায়েরকৃত মামলার আসামিদের ইমেইল একাউন্ট ব্লক করেছেন। আশা করা যায় নগদ থেকে অতি দ্রুত মানিলন্ডারিং, জুয়া, জালিয়াতির চক্রকে বের করে এখানে শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে।’  

তিনি বলেন, ‘সবশেষে, দেশের নামকরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে নগদে একটি নতুন বোর্ড গঠনের বিষয়ে মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী গত সপ্তাহে একটি ঐক্যমত্তে পৌছেছেন।’

অপর পোস্টে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, ‘টাকা সরানোর অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নগদের কাছে পরিচালনা ব্যয় ও যাবতীয় বিলসহ ২ মাসের হিসাব জানাতে চেয়েছি। তখন জানতে পারি সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ওঠানো হয়েছে আনুমানিক ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোম্পানির পরিচালনা ব্যয়, বেতন-ভাতা, ভাড়া, ভেন্ডর বিল সবই রয়েছে। তাই অভিযোগ ওঠা দেড়শ কোটির অংক আমি বুঝতে পারছি না।’

তিনি লেখেন, ‘মানবজমিনকে অনুরোধ করবো অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করতে, অর্থ সারানোর খাত গুলো উল্লেখ করতে। কোনো একক সংস্থা নয়; নতুন সিইওকে ত্রিপাক্ষিক একটা ফরেন্সিক করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উল্লেখ্য যে, ১১-২৭ মে সময়কাল ছাড়া বাকি সময় নগদের পরিচালনা বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই ছিল।’