নোয়াখালীতে রেকর্ড বৃষ্টি, জোয়ারে উপকূলজুড়ে চরম দুর্ভোগ
নোয়াখালীতে ভারি বৃষ্টিপাত এবং গভীর নিম্নচাপের কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। যার ফলে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো হাঁটুসমান পানিতে ডুবে গেছে।
জেলা আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় এবং বৃষ্টিপাতের ধারা সারাদিন অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা, পাশাপাশি নদী ভাঙনও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় গত বুধবার থেকে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে নৌ-যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় সাত লাখ মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলা উদ্দিন জানান, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি চললেও কিছু নিচু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে সমুদ্র এখনও উত্তাল থাকায় নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। জোয়ারের পানিতে রাস্তা ও কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে দ্বীপবাসীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হাতিয়ার ২৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী জেলা শহর মাইজদীতে যেতে পারছেন না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, শতাধিক যাত্রী হাতিয়া যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন একটি মরদেহ বহনকারী দলও। যাত্রী মো. আবদুর রহিম জানান, নৌ-চলাচল বন্ধ থাকায় তারা মরদেহসহ ঘাটেই আটকে রয়েছেন।
স্পিডবোট চালক মাহফুজ আলম বলেন, নৌ-পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনো নৌযান চলাচল করবে না। প্রশাসনের কঠোর তত্ত্বাবধানে হাতিয়া রুটের সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, বেড়িবাঁধ না থাকায় অতিরিক্ত জোয়ারের পানি নিঝুমদ্বীপ পুরোপুরি প্লাবিত করেছে। হাতিয়া ছাড়াও কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও আশ্রয়সেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টাকা নগদ সহায়তা এবং ৩০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।