বড়পুকুরিয়া থেকে ৩ বছরে ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা তোলার পরিকল্পনা
দেশে যখন প্রচণ্ড জ্বালানি সংকট, তখনও মজুদ কয়লা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না সরকার। পাঁচটি খনির মধ্যে মাত্র একটি খনির কয়লা কাজে লাগছে সরকারি মালিকানাধীন একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। তিন ইউনিটের ৫২৫ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও সব সময় পূর্ণক্ষমতায় চলে না। ফলে একমাত্র বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা সীমিত পরিসরে উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগনো হচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সূত্রে জানা যায়, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ২৪ লাখ মেট্রিক টন উত্তোলন করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী আড়াই বছরের মধ্যে বাকি কয়লা উত্তোলনের পরিকল্পনা করেছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) কর্তৃপক্ষ। কয়লা উত্তোলনে তৃতীয় দফায় চুক্তি শেষে ইতোমধ্যে চতুর্থ চুক্তি করেছে কোম্পানিটি। তবে এ চুক্তির বাইরে আরও ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হবে। সেক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে। তবে এ কয়লা কোথায় কাজে লাগবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ কয়লা ২০৩০ সাল পর্যন্ত তুলবে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশ্ন উঠেছে, ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা তিন বছরে কেন্দ্রটিতে লাগবে কিনা? কারণ এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে; কখনও কখনও দুটি ইউনিট বন্ধ থাকে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে বড় পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলনের একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেখানো হয় কয়লা উত্তোলনে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদারের সঙ্গে চতুর্থ চুক্তির আওতায় ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত মোট ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান চুক্তিতে ২৪ দশমিক ৭৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২৭ সালের মধ্যে বাকি কয়লা উত্তোলন করা হবে। একই সঙ্গে আরও ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হবে ২০৩০ সাল নাগাদ।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারের প্রকৃত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তোলিত কয়লা অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা যায় কিনা, বাজারের চাহিদা এবং মূল্য যাচাই করে তার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি করতে হবে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলোর বয়স ও প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত কয়লা ব্যবহারের বাস্তব লক্ষ্যমাত্রা পিডিবি থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয় বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষকে।
উল্লেখ্য দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলায় ৫টি কয়লা ক্ষেত্র রয়েছে। এগুলোর মোট মজুদ সাত হাজার ৮২৩ মিলিয়ন টন, যা ২০০ টিসিএফ গ্যাসের সমান। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সেন্ট্রাল পার্ট থেকে কয়লা তোলা হচ্ছে ২০০৫ সাল থেকে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার বৈঠকে বড়পুকুরিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন স্টাডি পরিচালনা করা হচ্ছে যার অংশ হিসেবে খনির উত্তরাংশে আরও ৬টি বোরহোল খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পিডিবি সূত্রে জানা যায়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের জন্য বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টন কয়লার দরকার হয়। কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময় কোনো না কোনো ইউনিট বন্ধ থাকে। যদি সব সময় দুটি ইউনিট চালু থাকে সেক্ষেত্রে বছরে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কোনো ইউনিট বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হতে থাকে।