ট্রাইব্যুনালে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ট্রাইব্যুনালে প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দাখিল করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (ট্র্যাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার বরাবর) গতকার রবিবার এই অভিযোগ দাখিল করেন।

গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের বলেন, পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জের ভিত্তিতে প্রথম জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলো।

চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও ‘সম্পৃক্ততা’ রয়েছে বলে মন্তব্য করে তাজুল

বলেন, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির তদন্ত চলছে, সেজন্য তাদেরকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি। তবে নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনার যে ভূমিকা রয়েছে তাদের, সেটার বর্ণনা এই চার্জশিটে রয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, এর মধ্যে একটি অডিও কল রয়েছে হাবিবুর রহমানের, যিনি পুলিশ কমান্ড সেন্টার থেকে ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমাতে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন পুলিশ সদস্যদের। উনার এই নির্দেশের পরই প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেন পুলিশ সদস্যরা।

এর আগে গত ২১ এপ্রিল তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। হাবিবুর রহমান ছাড়াও বাকি আসামিরা হলেন- ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ডিএমপির রমনা জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম, রমনা জোনের সাবেক সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ইমরুল, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন, শাহবাগ থানা) আরশাদ হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন, ইমাজ হোসেন ইমন ও নাসিরুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগে বলা হয়, রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তদন্ত সংস্থা এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর চিফ প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দেওয়া এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনটি ৯০ পৃষ্ঠার। তদন্ত করতে তদন্ত সংস্থার সময় লেগেছে ৬ মাস ১৩ দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, দুটি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১ টি এবং ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।