আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণে লাগাম
টানা বৃদ্ধির পর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণে কিছুটা লাগাম পড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে। যদিও বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায় ও পুনঃতফসিল বেশি করে থাকে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদার করেছে। এ কারণে কমেছে খেলাপি ঋণ।
তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা খেলাপি, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এটি আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বরের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৫২ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমলেও বছরের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া এ খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখনও খেলাপি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হার কমাতে হলে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবই যে খারাপ তা নয়। কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অনেক ভালো। তারা ভালো ব্যবসা করছে এবং ঋণ আদায়ের হারও ঊর্ধ্বমুখী। তার পরও সার্বিক খাতে ৩৩ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। তাই এই খাতকে নতুন করে সাজাতে হবে। এখন আমরা ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে ব্যাংক সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছি। একই ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোতেও সংস্কার কাজ শুরু হবে।
বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথমালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বাদে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান তারল্য সংকটে ভুগছে। সূত্রগুলো বলছে, আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করে গেছেন, তার জের পুরো খাতকেই টানতে হচ্ছে। পিকে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই এখন খেলাপির হার বেশি।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কমলেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে দেশের ব্যাংকগুলোতে। গত বছরের শেষে তিন মাসে ব্যাংক খাতে প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। ফলে এ খাতে ফের আমানতকারী ও আমানত দুই-ই বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে আমানতকারী বেড়েছে ২৬ হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে তিন মাসে নতুন আমানত বেড়েছে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা। এর আগে টানা পৌনে দুই বছর রেকর্ড পরিমাণ আমানতকারী হারিয়েছিল খাতটি।