মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি বাড়াতে বেছে নিয়েছি ‘পাখিদের বিধানসভা’
সাক্ষাৎকার
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় গতকাল মঞ্চস্থ হলো থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের পরিবেশনা ও প্রযোজিত নাটক ‘পাখিদের বিধানসভা’। পারস্যের কবি ফরিদ উদ্দীন আত্তার রচিত ধ্রুপদী কবিতা মানতিকুৎ তোয়ায়ের অবলম্বনে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আহমেদুল কবির। এ নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- অপূর্ব কুমার কুণ্ডু
ফরিদ উদ্দিন আত্তারের কবিতা নির্বাচন করার বিশেষ কারণ কী ছিল?
আমাদের বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বরাবরই একাডেমিক অনুশীলনকে বৃহত্তর জনসাংস্কৃতিক পরিসরে উপস্থাপনের ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী। সে বিশ্বাসে স্বদেশ-প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ক্লাসিক এবং আধুনিক সাহিত্য নিয়ে কাজ করাটা আমাদের বরাবরের স্বাচ্ছন্দ্য। এবারে আমাদের বিবেচনার তালিকার পারস্য প্রতিভা নিয়ে কাজ করা। পারস্য প্রতিভায় ফেরদৌসী-শেখ সাদী- জালালউদ্দীন রুমী আমাদের কাছে অধিক পরিচিত। জালালউদ্দীন রুমীর শিক্ষাগুরু ফরিদ উদ্দীন আত্তার। একদিকে আধ্যাত্মিক যাত্রাপথ, অপরদিকে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি, সহাবস্থান, সহিষ্ণুতা, অন্তর্ভুক্তিমূলকতা এবং মনুষ্যত্বের মূল্যায়নের স্বার্থে বিষয় হিসেবে ‘পাখিদের বিধানসভা’কে বেছে নেওয়া।
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
এটি মঞ্চে আনতে গিয়ে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে?
কবিতা-গল্প-উপন্যাস-নাটক তথা সাহিত্যের সব উপকরণের সন্নিবেশ নিয়ে যেমন একটা মহাকাব্যের গঠন দাঁড়িয়ে যায়, অনেকটা সেভাবে আমি আমার শিল্প সৃজন পথে সুফিবাদ ঘরানায় একটা নাটক নির্মানের প্রথম অভিজ্ঞতা লাভের মুখে বুঝলাম, এই প্রযোজনাটা একটা মহাকাব্যিক উপস্থাপনা দাবি করে। ফলত একদিকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তাত্ত্বিক বোধের অন্বেষণ অপরদিকে মহড়ায় নিখুঁত চরিত্র চিত্রণ। পুরো কাহিনিতে যেহেতু পাখিদের চরিত্রের মোড়কে বিশ্বজনীন বার্তা ঘোষিত হয় ফলে শব্দ-বাক্য-সংলাপের দৃশ্যকল্প শারীরিক ভাষায় নির্মাণ ছিল ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বস্ত গড়ন। সুফি সংগীত সংযোগে আবেগ আর ব্রেখটের অ্যালিনিয়েশন পদ্ধতিতে চিন্তাকে জিইয়ে রাখাটা ছিল প্রধানতম হাতিয়ার। প্রতিটি শব্দের অন্তর্নিহিত অর্থকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যেন দৈহিক-বাচিক-সাত্ত্বিক অবয়বে দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ের গহিনে প্রবেশ করাতে পারে সেটা ছিল এক গভীর অনুশীলন। পাশাপাশি সেট-কস্টিউম ও লাইটের তীক্ষè ও বহুমাত্রিক প্রয়োগে মহাজাগতিক পরিভ্রমণ যেন ভিন্ন ভিন্ন স্তরকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, সেটাই এক অধরাকে ধরতে চাওয়ার আমাদের সমবেত প্রচেষ্টার প্রতিফলন। এই পরিকল্পনা, এই নির্দেশনা এক অর্থে আমি-আমরা-আমাদের এক যুগপৎ সম্মিলিত আত্মখননের মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক পথে আত্মার আত্মিক উত্তরণ।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
মঞ্চায়নের পর কি মনে হলো, প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে?
এই মৌসুমে শেষবারের মতো মঞ্চস্থ হলো পাখিদের বিধানসভা। স্টুডেন্টরা পাস করে বের হয়ে যাবে, ফলে নিয়মিত মঞ্চায়ন সব সময় সম্ভব নয়। বড় টিম, বিশাল আয়োজন সব সময় এক করা কঠিন। আমাদের এই সমবেত আয়োজন অনেক দর্শক উপভোগ করেছেন, এটাই প্রশান্তির জায়গা।
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা