মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ!

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি
২৪ মে ২০২৫, ১২:২০
শেয়ার :
মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ!

ছোট ফেনী নদী ও বামনীয়া নদীর অব্যাহত ভাঙ্গণে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নোয়াখালীর জেলার উপকূলীয় উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। গত বছর মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে নদী ভাঙ্গণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধির অর্থলোলুপতাকে প্রাধান্য দিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রশ্রয়ে মুছাপুর রেগুলেটরের আশপাশ থেকে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি সিএফটি বালু উত্তোলন করার ফলে মুছাপুর রেগুলেটর ও ক্লোজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায় ।

ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে উপকূলীয় এ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন, চরএলাহী ইউনিয়ন ও চরফকিরা ইউনিয়নের বেশকিছু অংশ। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ, বাজার, ঘরবাড়ী, পোল-কালভার্ট, মৎস্য ও পশু খামারসহ সবই। ভাঙ্গন কবলিত পরিবারের সংখ্যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। মুছাপুর রেগুলেটর ভাঙ্গার পর এতদাঞ্চলের যেসব পরিবার বাড়ী-ঘরহারা হয়েছেন, তারা বেড়িবাঁধ ও রাস্তার আশপাশে বা কারও বাগানে ও ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে্ন। এদের পুনর্বাসনে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, তা কেউ বলতে পারছেন না। এরপরও নদী ভাঙ্গণ কবলিত বাড়ী-ঘর হারা মানুষের কান্না থামছে না। 

এদিকে ভাঙ্গণ রোধকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ঠিকাদারদের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলার কাজ চললেও অনিয়ম ও অতি নিম্নমানের কাজ ধীর গতিতে চলছে। এতে ভাঙ্গণ রোধে তেমন কোনো ফলোদয় না হলেও একদিকে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেট ভারি হচ্ছে। অপরদিকে সরকারি বরাদ্দের অপচয়ও আত্মসাত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। 

স্থানীয়রা অভিযোগে জানান, নদী থেকে অতিমাত্রায় অবৈধ বালু উত্তোলন ও অনুনমোদিত বালুবাহি বাল্ক হেড চলাচলের কারণে ভাঙ্গণের তীব্রতা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। গত এক বছর ও ইতোমধ্যেই ভাঙ্গন কবলিত হয়েছে প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকা। পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়সহ সরকারি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তেও রেগুলেটর এলাকার আশপাশ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ক্লোজার ও রেগুলেটর ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টির সত্যতার প্রমাণ মেলে। 

নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভিত্তিতে জিও টিউব ব্যাগ স্থাপন, প্রস্তাবিত ক্রস ড্যাম নির্মাণ, মুছাপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ, বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই চাপারাশি খালের ওপর নির্মিত ১৯ ভেল্টের ¯স্লুইজ পাশে প্রায় ৫কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের। 

এদিকে ভাঙ্গণ ঠেকাতে এবং উপক‚লীয় মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় সরকার এবং প্রশাসনও তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ, জলবায়ু পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল হাসানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ মুছাপুর রেগুলেটর ও ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্লোজার ও রেগুলেটর নির্মাণ লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করে যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে স্থানীয়দের আস্বস্ত করেছেন। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বর্ষা মৌসুমের পূর্বে অধিক ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো রিমার্ক করে যেন কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়, সেজন্য ডিজাইন টীম এসে পরিদর্শন করে গেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘অতি দ্রুততম সময়ে মুছাপুর ক্লোজার ও রেগুলেটর পুনরায় নির্মাণ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নিমিত্তে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ 

তবে, ওই সময়টুকু পর্যন্ত স্থানীয় সব মহলের সহযোগিতা ও ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।