জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ জিয়া মঞ্চ নেতার
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা শফিকুল ইসলামকে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম পেশাজীবি সংগঠন রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মাসের ৩০ এপ্রিল রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তুলশীডাঙ্গা বিল সংলগ্ন এলাকায় রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিলের নেতৃত্বে ও স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ী আ. জলিলের স্কেবেটর কর্তৃক অবৈধভাবে মাটি খনন করে বিক্রির সময় মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) একটি স্কেবেটর ও একটি মাটি পরিবহনের ট্রাক্টর জব্দ করেন। জব্দ করাকালীন সময়ে স্কেবেটর (ভেকু) এবং মাটি পরিবহনের (ট্রাক্টর) মালিক পালিয়ে গেলে অভিযান স্থলে জরিমানা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট স্কেবেটর ও ট্রাক্টর মির্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামের জিম্মায় প্রদান করে। এরপর আইন অনুযায়ী জরিমানা অথবা নিয়মিত মামলা হওয়ার কথা ছিল। তাদের জরিমানা যেনো কম করা হয়, এ বিষয়ে এসিল্যান্ডের কাছে সুপারিশ করার জন্য চেয়ারম্যানকে মুঠোফোনে বারবার অনুরোধ করে জিয়া মঞ্চের জেলা সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ।
এদিকে জরিমানা কম বেশি করার বিষয়ে এসিল্যান্ড কি বলেছেন, সে বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে জিয়া মঞ্চ নেতার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথোপকথনের রেকর্ড করে সেটিকে চেয়ারম্যান জব্দকৃত স্কেভেটর (ভেকু) ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছেন বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেন জিয়া মঞ্চ নেতা শাকিল।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি। এজন্য চেয়ারম্যান আমার বালু মাটির পয়েন্টে নিজেই এসিল্যান্ডকে ডেকে এনেছিলেন। এসিল্যান্ডের নাম করে চেয়ারম্যান আমার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে আমার কাছে কল রেকর্ড আছে। পরবর্তীতে গোপনে ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক জুয়েলের কাছে ২ লাখ টাকা নিয়ে ভেকু ছেড়ে দিয়েছেন। আমি এর ন্যায্য বিচার চাই।’
এদিকে ভেকু মালিক দাবিকারি জুয়েল বলেন, ‘আমি কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই চেয়ারম্যানকে গত ১০ এপ্রিল রাতে ২ লাখ টাকা দেওয়ার পর চেয়ারম্যান নিজ দায়িত্বে ভেকু মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।’
ওই ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমার ভেকুটা বিএনপির লোক শাকিল আর জুয়েল ভাড়া নিয়েছিলেন। পরে শুনি ভেকু এসিল্যান্ড জব্দ করেছেন। তারা ২ দিন ঘুরে যখন ছাড়াতে পারেন নাই, তখন আমি এসিল্যান্ড স্যারকে অনুরোধ করে মুচলেকা দিয়ে ভেকু ছাড়িয়া নিয়েছি। এখানে আমার সঙ্গে কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি।’
মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় শাকিল ও জুয়েল বিএনপির প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন শুরু করলে আমি বেশ কয়েকবার বাধা দিয়েছিলাম। এই কারণে তিনি পরিকল্পিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। আমি কোনো চাঁদা চাইনি।’
মিঠাপুকুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, ‘ভেকু ও ট্রাক্টর জব্দের সময় ঘটনাস্থলে কাউকে না পাওয়ায় তাৎক্ষনিক জরিমানা করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভেকু ও ট্রাক্টর চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়ার পর ভেকুর মালিক পুনরায় অবৈধ বালু মাটি বিক্রির কাজের সঙ্গে জড়িত হবে নাহ, এই শর্তে আমার অনুমতি নিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে মুচলেকায় স্বাক্ষর করে ভেকু নিয়ে গেছেন। এখানে কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন হয়নি। ভেকুর ভাড়াটিয়া মালিক আব্দুল জলিল, এটা নিশ্চিত করেই তার কাছে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জুয়েল নামে কোনো ব্যক্তির ভেকুর মালিকানার বিষয়ে আমার জানা নেই।’