নারী সংস্কার কমিশন পুনর্গঠনসহ ৪ দাবি রাবি ছাত্রী সংস্থার
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন পুনর্গঠন করাসহ চার দফা দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা রাবি শাখার আয়োজনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
কর্মসূচি থেকে চার দফা দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও প্রতিবেদন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ধর্ম, সংস্কৃতি ও জনমতকে অবজ্ঞা করে গঠিত বর্তমান কমিশন বাতিল করে ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় বিশ্বাসী এবং দেশের অধিকাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন এমন প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। পতিতাবৃত্তি নির্মূলের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট নারীদের মানবিক ও হালাল উপায়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় বিধানসমূহকে সংবিধানের আলোকে রক্ষা করে নারী উন্নয়নের একটি ভারসাম্যমূলক ও সমাজবান্ধব রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
বর্তমান কমিশনের সাতটি সুপারিশকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করেন তারা। সেগুলো হলো- মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী পুরুষকে সমান সম্পত্তি প্রদানের প্রস্তাব (পৃষ্ঠা-২৫) যা ইসলামী শরিয়াহ ও সংবিধানে সংরক্ষিত ধর্মীয় স্বাধীনতার স্পষ্ট লঙ্ঘন। সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন (পৃষ্ঠা- ৯) এটি হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পারিবারিক স্বাধীনতা ও ধর্মচর্চাকে বাধাগ্রস্থ করবে এবং এক ধরনের আইনগত ধর্মত্যাগ চাপিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
বিবাহ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় জাতিসংঘ প্রণীত CEDAW বাস্তবায়নের প্রস্তাব (পৃষ্ঠা- ৯) যা মূলত ইসলামি বিধানকে অগ্রাহ্য করে পশ্চিমা নারীবাদী নীতি চাপিয়ে দেওয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্র। বহুবিবাহ বিলোপের দাবি, অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এটা শর্ত সাপেক্ষে জায়েজ করেছেন। আর কোনো মুসলিম কখনোই আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধানে সম্ভুষ্ট থাকতে পারে না। নারী পুরুষের সম্পর্ককে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হিসেবে তুলে ধরা (পৃষ্ঠা ৯) এটি বাঙালি সমাজে প্রচলিত পারস্পরিক সহমর্মিতা, মমতা ও সহযোগিতার সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেয়ার মত বিপদজনক চিন্তা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
পিতার নাম গোপন করে সন্তানের নিবন্ধন, পাসপোর্ট তৈরি করার বৈধতা চাওয়া হচ্ছে, যা প্রকারান্তরে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ। পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দিয়ে যৌনকর্মীদের শ্রমজীবী হিসেবে স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদানের সুপারিশ, এটি সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের একটি ভয়ংকর ব্যবস্থা। ইসলাম ও সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে মানে না বরং তা নির্মূল করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
কমিশনের ইসলামবিরোধী সুপারিশের বিষয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও অবস্থান তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, এই কমিশনের সদস্যরা একটি বিশেষ মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন যা দেশের ধর্মপ্রাণ নারীদের মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন না। এই কমিশন কোনোভাবেই বাংলাদেশের নারীদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিচ্ছবি নয়। এই প্রতিবেদন গবেষণাধর্মী নয়, একপেশে মতাদর্শিক বক্তব্য। তাতে সমাজবিজ্ঞানের মৌনিক পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়নি, তথ্যবিহীন এই নীতিমালা আসলে একটি মতাদর্শিক প্রোপাগান্ডা মাত্র। নারী উন্নয়নের নামে ধর্মীয় বিধানকে বাতিল করার যে অপচেষ্টা করা হচ্ছে তা কেবল ইসলাম নয় সকল ধর্মের প্রতি অবমাননার শামিল এবং দেশে সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করবে।
‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’কে নতুন নাটক উল্লেখ করে তারা বলেন, নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার পর ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রার’ নামে নতুন নাটক শুরু করে তারা। যেখানে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, অশালীন পোষাকে নারীর অধিকার আদায়ের নামে নারীর ভূষণকে খর্ব করা হয়েছে। ধর্মীয় শিষ্টাচারকে উগ্রবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যা ধর্মীয় অবমাননা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এ ছাড়া ট্রান্স মুক্তিকে নারীমুক্তি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ ট্রান্সজেন্ডার এর ধারণা বিকৃত মস্তিষ্ক থেকেই উদ্ভুত, মানবকল্যাণেই যার বৈধতা নয় বরং চিকিৎসা প্রয়োজন।
তারা আরও বলেন, এই দেশ ইসলামপ্রিয় মানুষের দেশ। ধর্মহীন মতবাদ এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে নারী উন্নয়নের নামে যদি ইসলামবিরোধী ও সমাজবিধ্বংসী কোন ব্যবস্থা ঝাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে দেশের লক্ষ কোটি মুসলমান এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।
আমরা সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, যদি এই প্রতিবেদন প্রত্যাহার ও কমিশন বাতিলে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি গণবিরোধী অবস্থানের দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রাবি শাখা ইসলামি ছাত্রী সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।