অপসারিত কর্মীদের আন্দোলন নিয়ে যা বললো বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
২০ মে ২০২৫, ২১:১৩
শেয়ার :
অপসারিত কর্মীদের আন্দোলন নিয়ে যা বললো বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হতে অপসারিত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। আজ মঙ্গলবার বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন) তামান্না কবীরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে চলমান আন্দোলনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য অভিন্ন সার্ভিস কোড ও একীভূত করার বিষয়টি সরকার/রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। এটি বিআরইবি বা সংস্থা প্রধানের এখতিয়ারভূক্ত নয়। এ বিষয়ে সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এ বিষয়টি কেন্দ্র করে ও গ্রাহকদের জিম্মি করে অফিস শৃঙখলা পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিভিন্ন সমাধানযোগ্য যৌক্তিক সুযোগ সুবিধাদী প্রদানের লক্ষ্যে প্রতি মাসে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সমিতিসমূহ পরিদর্শন করে প্রত্যেক সমিতির সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়ে আন্তরিকভাবে সকলের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধাগুলো দ্রুততম সময়ে মধ্যে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এটি একটি সংস্কারমূলক ও ইতিবাচক চলমান প্রক্রিয়া। গতবছরের ১৭ অক্টোবর দেশব্যাপী ব্লাক-আউট করে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ফেলে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেপ্তার করে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা স্বাধীনভাবে একই ধরণের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। যা ৩.৫ কোটি গ্রাহকের জন্য হুমকীস্বরুপ। তাদের ষড়যন্ত্রমূলক ব্ল্যাকআউট কার্যকলাপের কারণে নেত্রকোনায় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ১ জন রোগী মারা গেছেন, যা ন্যক্কারজনক।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করণের লক্ষ্যে তাদের সাপ্তাহিক ছুটি ১দিনের পরিবর্তে ২ দিন করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনা ৫ শতাংশ কার্যকর করা হয়েছে এবং পবিসসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল সুবিধা প্রদানের সুপারিশসহ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পবিসের সাংগঠনিক কাঠামোভূক্ত ৪ হাজার ৭২৩ জন লাইনম্যান লেভেল-১ কে শূন্যপদের বিপরীতে নিয়মিত করা হয়েছে। ১ হাজার ৩০২ জন ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে নিয়োজিত বিলিং সহকারীকে অন-প্রবেশনে নিয়োগ করা হয়েছে। লাইন শ্রমিকদের চুক্তির মেয়াদ ৬ মাস/১ বছরের পরিবর্তে ২ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিটার রিডারদের চুক্তি ৩ বছর এবং এক জায়গায় ৪ মেয়াদে ১২ বছর অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা পূর্বে ৩ মেয়াদে ৯ বছর ছিল। এ ছাড়া ৬৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে তাদের আবেদন মোতাবেক পারস্পরিক বদলি করা হয়েছে। পবিসসমূহে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের স্বামী/স্ত্রী একই কিংবা নিকটবর্তী কর্মস্থলে বদলী/পদায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বদলিজনিত রদবদল করা হচ্ছে, যা একটি সংস্কারমূলক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বিদ্যুৎ সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে চাঁদা আদায়, সভা-সমাবেশ আয়োজন ও অংশগ্রহণ, অপপ্রচার ছড়ানো গুরুতর অসদাচরণ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড হতে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে বেশি কিছু কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে বোর্ড জানিয়েছে, বাপবিবোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল কর্মকর্তা/কর্মচারী ‘আমি’ বা ‘তারা’ নয় ‘আমরা’ হিসাবে কর্মসম্পাদন করাসহ গ্রাহক সেবা নিশ্চিতকল্পে সততা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং চেইন অফ কমান্ড মেনে চলার জন্য সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা পবিস-২ এর আওতাধীন বুড়িচং উপজেলায় ও ফেনী পবিসের আওতাধীন পরশুরাম উপজেলায় বন্যা দূর্গতদের মাঝে বাপবিবো ও পবিস এর কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সমন্বয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিরত অবস্থায় কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেলে তার দাফন/অন্তোষ্টিক্রিয়ার ব্যয়সহ পরিবারের সদস্যদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদান বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিভিন্ন যৌক্তিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রতি মাসে বাপবিবোর্ডে মত বিনিয়ম সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পবিসের বিদ্যমান সকল অফিসের গ্রাহক সংখ্যা ও বিতরণ লাইন অনুপাতে লাইনম্যানের প্রাপ্যতা নির্ধারণ এবং লাইনম্যান টুলসহ অন্যান্য মালামালের চাহিদা সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাপবিবোর্ড ও পবিসের উদ্যোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিভিন্ন যৌক্তিক সুযোগ-সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হলেও গ্রাহক সেবাকে বাধাগ্রস্ত করে সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যক্তিগত সুবিধা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের অযৌক্তিক কার্যক্রম প্রতিনিয়ত পরিচালনা করে আসছে। এতো সুযোগ সুবিধা প্রদানের পরেও ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পুনরায় আগামীকাল ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি আদায়ের পায়তারা করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মতো একটি সফল ও গ্রাহক সেবাদানকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ১৪ কোটি মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও চাকরি বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমকে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।