অক্সফাম ও ফেয়ার পে ফাউন্ডেশনের সমঝোতা স্মারক সই
টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শ্রমিকবান্ধব চা শিল্পের লক্ষ্যে, অক্সফাম এবং ফেয়ার পে ফাউন্ডেশন (এফপিএফ) যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এই কৌশলগত অংশীদারিত্বটি বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ন্যায্যতা, নৈতিক ব্যবসা, সমতা ও শ্রম অধিকারে ন্যায়বিচারের জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে। বাংলাদেশের চা বাগান থেকে এই যাত্রা শুরু হচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার ফেয়ার পে ফাউন্ডেশনের রাষ্ট্রদূত ও চেয়ারম্যান স্যার শেখ আলিউর রহমান কেজিওআর ওবিই এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে একটি ‘মডেল টি স্টেট’ গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে, যা ন্যায্য মজুরি, দায়িত্বশীল ও নৈতিক ব্যবসা, সম্মানজনক শ্রম পরিবেশ, জলবায়ু-বান্ধব চর্চা, জেন্ডার ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উদাহরণ হবে।
ঔপনিবেশিক যুগের কাঠামো ও বৈষম্যমূলক অনুশীলনের কারণে চা শিল্প এখনো হাজারো শ্রমিকের বিশেষ করে নারীদের দারিদ্র্যের একটি মূল উৎস। এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সেই দুষ্টচক্র ভাঙতে এবং ন্যায্য মজুরি, নৈতিক উৎপাদন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করবে দুই প্রতিষ্ঠান।
গত ১৯ মে যুক্তরাজ্যের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক বাংলাদেশি প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সমঝোতা স্মারক নিয়ে ফেয়ার পে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান স্যার শেখ আলিউর রহমান বলেন, ‘এই চুক্তি শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি যা শ্রমিকদের মর্যাদা, সমতা এবং সম্ভাবনাময় জীবনের জন্য কাজ করবে। অক্সফামের তৃণমূল ক্ষমতায়নের অভিজ্ঞতা এবং ফেয়ার পে-এর বৈশ্বিক ন্যায্যতার দৃষ্টিভঙ্গি একত্রে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।’
এই অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশে মডেল টি স্টেট বাস্তবায়নে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অক্সফাম ও এফপিএফ একসঙ্গে কাজ করবে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক কাঠামো ও ক্ষমতার বিশ্লেষণ, বাজার সম্ভাবনা যাচাই, ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি প্রয়োগ, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং নারী শ্রমিকদের নেতৃত্বে সক্ষমতা বৃদ্ধি।
অনুষ্ঠানে অক্সফাম গ্রেট ব্রিটেনের চিফ এক্সিকিউটিভ ড. হালিমা বেগম বলেন, ‘ন্যায্য মজুরি নিয়ে এই অংশীদারিত্ব মাধ্যমে আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মডেল টি স্টেট-এ বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা এমন ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে শ্রমিক ও মালিক উভয়ই অংশীদার, সমন্বিত লক্ষ্য ও মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করবে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এই সমঝোতা স্মারকে স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি ও প্রভাব বিস্তারের কৌশলগত দিকনির্দেশনাও রয়েছে। বাংলাদেশে গ্লোবাল ফেয়ার পে চার্টার চালু থেকে শুরু করে, পাঁচ বছর মেয়াদি গণমাধ্যম অংশীদারিত্ব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক বাজারে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হবে।
অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে বলেন, ‘ন্যায্য একটি একটি অধিকার। এই অংশীদারিত্ব আমাদের বৈষম্যমূলক কাঠামো চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিচ্ছে এবং সম্মান, স্থায়িত্ব ও ন্যায়বিচারে ভিত্তিক একটি বিকল্প বাস্তবতা নির্মাণ করবে। আমরা কেবল কল্পনা করছি না—আমরা পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করছি।’
এই সমঝোতার মাধ্যমে অক্সফাম এবং ফেয়ার পে ফাউন্ডেশন সরকার, সিভিল সোসাইটি এবং বেসরকারি খাতকে আহ্বান জানাচ্ছে—একটি এমন বিশ্ব গড়ে তুলতে, যেখানে ন্যায্যতা ও সমতা কেবল আদর্শ নয়, বরং বাস্তবতা।