শোবিজ তারকাদের নিন্দা-প্রতিবাদ

নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার

বিনোদন সময় প্রতিবেদক
২০ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
শোবিজ তারকাদের নিন্দা-প্রতিবাদ

চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সকাল ১০টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক মাধ্যমে শোবিজ তারকারা জানিয়েছেন নিন্দা-প্রতিবাদ। তারকাদের প্রতিক্রিয়া নিয়েই এ লেখা।

আজমেরী হক বাঁধন

কি লজ্জার বিষয়! এই মেয়েটির কোনো দোষ নেই। সে মোটেই দায়ী নয়। যারা ফ্যাসিবাদী শাসন চালিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে, তাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান পরিস্থিতি এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন দেশে বাস করি না, যেখানে ন্যাযবিচার সাধারণভাবে প্রচলিত। তবে এবারের ঘটনাটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।

আশফাক নিপুন

এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনি এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় নুসরাত ফারিয়া দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনোরকম প্রহসন চাই নাই, এখনও চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া বা পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করতে হবে।

শরাফ আহমেদ জীবন

নুসরাত ফারিয়া একজন শিল্পী। সে ‘মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করেছে। আরও অনেক শিল্পীই অভিনয় করেছে। অনেক শিল্পী অডিশন দিয়েছে। বাদ পড়েছে। অনেকে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। তাহলে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হবে? আমি ভাবছি আমার কথা। নুসরাত ফারিয়ার জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। আমাকে ডাকলে আমিও যেতাম। বর্তমান সরকার কোনো শিল্পীকে সরকারি কোনো কাজে ডাকল এবং পরের সরকার এসে গ্রেপ্তার করল! হইতেই পারে। তাইলে শিল্পীর কি করা উচিত! দেশের বা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা! বিচার হোক প্রকৃত অপরাধীর! এমন অনেক শিল্পী আছে যারা, অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার ধারণা, সাধারণ মানুষ এতে খুশি হয়েছে। কারণ এরা আসলে প্রকৃত শিল্পী ছিল না! এরা ছিল শিল্পীর মুখোশধারী ক্ষমতালোভী! নুসরাত ফারিয়াকে আমার অন্তত এদের দলের মনে হয়নি। শেষমেশ, আমার ‘চক্কর’ সিনেমার একটা সংলাপ দিয়ে শেষ করি, ‘সব আলামত সত্যি হয় না। কিছু আলামত মূল কাজের ফোকাস নষ্ট কইরা দেয়।’

খায়রুল বাসার

উনি অভিনেত্রী, উনার কাজ অভিনয় করা। কোনো গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন, সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ

তিনি করবেন, এই উনার কাজ। আমার ধারণা, উনি রাজনীতি সচেতনও না এবং উনি কোনো রাজনীতি করেনও না, এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়াকান্নাও করেন নাই। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা? ওই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সকলকেই অডিশনের জন্য ডাকা হয়েছিল, অনেকেই অডিশন দিয়েছেন। যারা অডিশন দিয়ে সিলেক্টেড হয়েছেন তারাই অভিনয় করেছেন। এটা সিম্পল! এখানে কেউ রাজনীতি করতে যাননি। অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোনো ক্রাইম না। নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোনো রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন, এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের করণীয় কি হবে? এই সরকার পরবর্তীতে অন্য সরকার তাদের হেনস্তা করবে এই মেনে হুকুমের দাস হবে?

‘নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা’

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারে বিব্রত হয়েছেন বলে জানান। তিনি লেখেন, ‘আমি সাধারণত চেষ্টা করি আমার মন্ত্রণালয়ের কাজের বাইরে কথা না বলতে। কিন্তু আমার তো একটা পরিচয় আছে, আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুই দিন পর সেখানেই ফিরে যাব। নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর একটা ঘটনা হয়ে থাকল আমাদের জন্য। আমাদের সরকারের কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা। ঢালাও মামলার ক্ষেত্রে আমাদের পরিষ্কার অবস্থানÑ প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্টতা না থাকলে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল।’

সংস্কৃতি উপদেষ্টা লেখেন, ‘ফারিয়ার বিরুদ্ধে এই মামলা তো অনেক দিন ধরেই ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার বিষয় আমার নজরে আসেনি। কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পরই এই ঘটনাটা ঘটে। এই সব ঘটনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। আমি বিশ্বাস করি, ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে এবং এই ধরনের ঢালাও মামলাকে আমরা আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করতে পারবÑ এই আশা। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধান কাজ জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার করা।’