আন্দোলনে অচল নগরভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ মে ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
আন্দোলনে অচল নগরভবন

বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে তার সমর্থকরা। তারা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা মেরে ডিএসসিসির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন। নগর ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার অফিসও বন্ধ। ফলে সেবা প্রত্যাশীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, আমরা অফিসে যেতে পারছি না। কোনো কাজই হচ্ছে না। এদিকে নগর ভবন ও আশপাশের এলাকায় আজ ব্লকেডের ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক-সমর্থকরা।

ঢাকার গুলিস্তানে নগর ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান ও বিক্ষোভের কারণে গতকাল আশপাশের সড়কে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। নগর ভবনের মূল ফটকসহ সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

শপথের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাকের সমর্থকরা। গতকাল নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার (আজ) বেলা ১১টা থেকে নগর ভবন ও আশপাশের এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হবে।

ইশরাকের সমর্থকরা স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কারণেই আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পরও ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারছেন না।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শপথের ইস্যুতে কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার চিঠিটি দেওয়া হয়। গতকাল রবিবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সিটি করপোরেশন-১) মাহবুবা আইরিন আমাদের সময়কে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কোনো মতামত আমরা পাইনি। মতামত পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গেজেট হয়ে যাওয়ার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এটা আসলে সরকারি সিদ্ধান্ত। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে সিদ্ধান্ত এলে এসবের কিছুই প্রয়োজন হবে না।

ইশরাকের সমর্থকদের অবস্থান ও বিক্ষোভের কারণে নগর ভবনের সামনের রাস্তায় সব ধরনের যান চলাচল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে বের হলে যান চলাচল শুরু হয়। দুপুর ১২টার পর ইশরাকের সমর্থকদের মিছিলটি নগর ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পুরানা পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব, শিক্ষাভবন মোড় ঘুরে ফের নগরভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে তারা আধাঘণ্টা অবস্থান করেন।

এর আগে সকাল ৯টা থেকে বঙ্গবাজার মোড় থেকে নগর ভবনে আসার রাস্তা ও গোলাপ শাহ মাজারের দিক থেকে নগর ভবনে আসার পথে ব্যারিকেড রাখা হয়। এ সময় কোনো যানবাহন এই পথ হয়ে চলাচল করতে পারেনি।

নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখার কারণে কর্মকর্তাদের কেউ অফিসে আসেননি। আর কর্মচারীদের একটি অংশ এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছেন। তালা লাগিয়ে দেওয়ার কারণে নগর ভবন থেকে দেওয়া সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। এসব সেবার মধ্যে রয়েছে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন ও নবায়ন, কর প্রদান ইত্যাদি। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, যত দিন না ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানো হবে, তত দিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

আন্দোলন চলাকালীন শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে মামলা হয়েছিল। শেখ ফজলে নূর তাপস প্রভাব খাটিয়ে সেই মামলার প্রক্রিয়া থামানোর চেষ্টা করেন। আদালত তখন আওয়ামী লীগের প্রভাবাধীন ছিল। তবু আমরা সব আইনি প্রক্রিয়া মেনে জয়লাভ করেছি। এখন গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও আমাকে শপথগ্রহণ করানো হয়নি। অথচ আমি শপথ নিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটে পরাজিত করেন। তবে চলতি বছর ২৭ মার্চ একটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করে। এরপর ২২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়ে গেজেট প্রকাশ করে।